২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জলবায়ু তহবিলের জন্য তদবির

নিজেদের করণীয় করতে হবে

-

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ক্ষতির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। একই সাথে পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের সীমাবদ্ধতাও জনজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির হুমকিতে রয়েছে উপকূলবর্তী জনপদের কোটি মানুষ। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বসবাস উপকূলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ মিটারের কম উঁচু। এর মধ্যে বিস্তীর্ণ উপকূলের বহু মানুষ জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততার মতো প্রকৃতির বৈরী আচরণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে এবং তাতে বাংলাদেশের ১১ শতাংশ এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এটি সত্য হলে দেশের প্রায় দুই কোটি লোককে আবাসন হারাতে হতে পারে।
এ ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানীয় জলের অভাব, ফসলহানি, উত্তরাঞ্চলে খরা, দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, সারা দেশে ভয়ঙ্কর বন্যার প্রকোপ ইত্যাদি বাংলাদেশের সমূহ হুমকির মুখে জনজীবন ও জীবিকা ক্রমবর্ধমান হারে বিপর্যস্ত।
এমন এক অবস্থার প্রেক্ষাপটে হুমকির মুখে পড়া দেশগুলোর ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে বছরে হাজার কোটি ডলারের একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছে উন্নত দেশগুলো। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ পায়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানিতে এক সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তহবিল সংস্থানের আহ্বান জানান। বলেন, মানবতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে, তখন সঙ্কীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
একই ফোরামে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব, সমষ্টিগত পদক্ষেপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল জোগানোর বিকল্প নেই। এ আহ্বান সময়োচিত। তবে বাংলাদেশের পরিবেশগত সঙ্কট কেবল আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতার পরিণতি নয়। এ জন্য বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের বিরূপ আচরণও বিপুলভাবে দায়ী। অভিন্ন নদীর পানি অবৈধভাবে আটকে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুকরণ প্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কখনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারিনি।
এর বাইরেও আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। পরিবেশ সংরক্ষণ, উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বৃক্ষরোপণে আমাদের সফলতা সামান্য। গাছ কাটার মহোৎসব চলছে সর্বত্র। বায়ুদূষণে আমরা বিশ্বের শীর্ষে। নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, দীঘি, পুকুর, ঝরনা বা জলাশয় সংরক্ষণে আমরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারিনি। জলাশয় ভরাট করে ফেলেছি।
বৈশ্বিক পর্যায়ে দেনদরবার করার পাশাপাশি নিজেদের করণীয়টুকুও আমাদের করতে হবে। সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসঙ্ঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কার্যত অসফল বলা যায়। সম্মেলনের একমাত্র সাফল্য হলো- জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার বিষয়ে ২০০টি দেশের সম্মতি অর্জন। এ সম্মতি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবে রূপায়ণ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। জলবায়ুর ক্ষতিসাধনের পেছনে মুখ্যত দায়ী বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। তাদের সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ুর ক্ষতি রোধের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সদিচ্ছার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।


আরো সংবাদ



premium cement