২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রামে সুপেয় পানির সঙ্কট

সমাধান বের করতে হবে

-


চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার পর এ নগরীর অবস্থান। কিন্তু এখানে নাগরিক পরিষেবা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। তাই নানা কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরীর ৬০ লক্ষাধিক মানুষ। এ মুহূর্তে টানা দুই মাস ধরে চলছে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার। অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ পাচ্ছেন না নগরবাসী। কোথাও কোথাও পানি মিললেও তা লবণাক্ত বলে পানের অযোগ্য। দিনের পর দিন পানির কষ্টে অতিষ্ঠ মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কোনো সুরাহা করতে ব্যর্থ। কিন্তু বছর বছর পানির দাম বাড়ানোয় ওয়াসার কোনো ঢিলেমি নেই। বছরে একাধিকবার পানির দাম বাড়ানোর দৃষ্টান্তও তৈরি করেছে সংস্থাটি। এমনকি পানির দাম এক লাফে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ানোর অনন্য নজিরও এ সংস্থার অর্জনে। নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম ওয়াসা। কিন্তু মানুষের চাহিদা পূরণে সেসব প্রকল্পের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। সেবাদানের পরিবর্তে বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জনের এমন মানসিকতায় মানুষের কাছে সংস্থাটির এমন ইমেজ দাঁড়িয়েছে যে, এটি প্রকল্পে এগিয়ে কিন্তু গ্রাহকসেবায় পিছিয়ে।
গত এপ্রিল ও চলতি মে মাসে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রচণ্ড গরমের সময় খাবার পানি না পাওয়া কতটা দুঃসহ তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। পানির আরেক নাম জীবন। পানির অভাব মানে জীবনের ওপর হুমকি। সেই হুমকিতে রয়েছেন নগরীর লাখো মানুষ। নগরীর পাঁচলাইশ, বহদ্দারহাট, পতেঙ্গা, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি লবণাক্ততার জন্য মুখে নেয়ার উপায় নেই। সবার পক্ষে নগদ টাকা ব্যয় করে বোতলের পানি কিনে খাওয়া অসম্ভব। যারা পারছেন তারা পানি কিনে খাচ্ছেন; যারা পারছেন না তারা ওয়াসার লবণাক্ত পানি খেয়ে ডায়রিয়া, বমিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির অন্যতম উৎস কাপ্তাই লেকে গত মার্চ মাস থেকে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে সরবরাহে টান পড়ে। চট্টগ্রাম ওয়াসা বলছে, কাপ্তাই লেক থেকে পানি না আসায় পানির আরেক উৎস হালদা নদীতে ঢুকছে কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি। ফলে হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেছে। ওয়াসা বলছে, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা ছাড়া এ মুহূর্তে তাদের আর কিছু করার নেই। অথচ নগরীতে চাহিদার শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহের কথা বলে একের পর এক প্রকল্প নিয়েছে সংস্থাটি। শোধনাগার ইত্যাদির পেছনে ব্যয় করেছে কোটি কোটি টাকা। নগরবাসী বলছেন, ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ বলে আকাশের দিকে যদি তাকিয়ে থাকতে হবে তাহলে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয়ে রকমারি প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজন কী?
চট্টগ্রাম শহরে এই মুহূর্তে পানির চাহিদা দৈনিক ৫০ কোটি লিটারের বেশি নয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন সরবরাহ করে ৪৬ কোটি লিটারের মতো। কিন্তু লবণাক্ততা ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় বর্তমানে ওয়াসার চারটি পানি শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা যাচ্ছে ৪১ কোটি লিটারের মতো।
ওয়াসার ব্যর্থতা শুধু সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে নয়; বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি সংস্থাটি। অনেক জায়গায় পয়ঃবর্জ্য খাল-নদী-নালায় মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে। নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির কারণ এই দূষণ।
আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার সুযোগ নেই। সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। সেটিই ওয়াসার দায়িত্ব। ওয়াসাকে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement