২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

কোটি কোটি টাকা কি পানিতে গেল

-

সবাই জানেন, মশার উপদ্রব কমে আসে শীতকালে। এমনকি অনেক সময় ঠাণ্ডার দিনে মশাই দেখা যেত না। কিন্তু এখন যেন সবই উল্টো। যেমন, নিকট অতীত থেকে দেখা যাচ্ছে, উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ায় মশার দুঃসহ উপদ্রব তো আছেই এমনকি শীত ঋতুতেও এই কীটের দংশন তাণ্ডব অব্যাহত থাকে। বর্তমানে দেশে ঠিক এ অবস্থাই চলছে। পৌষ-মাঘ মাসের শৈত্যপ্রবাহের দিনেও মশার উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ। অথচ প্রতি বছর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কোটি কোটি টাকার কথিত ওষুধ বিদেশ থেকে কিনে এনে মশকনিধনের সাফল্যের বয়ান প্রচার করছে। রাজধানীর সিটি করপোরেশন দুটিও ব্যতিক্রম নয়। একটি সিটি করপোরেশনের গুদামে পড়ে থাকা কোটি টাকার মশার ওষুধ নষ্ট হওয়ার চাঞ্চল্যকর সংবাদ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে মশার উৎপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে ঢাকা মহানগরীতে মশার প্রাদুর্ভাবে জনভোগান্তির উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, দুপুরের পর থেকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না মশার তাণ্ডব থেকে। বরং তখন বদ্ধ ঘরে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। কয়েল কিংবা অ্যারোসল মশার দৌরাত্ম্যরোধে স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তদুপরি এ সবের ভয়ানক ক্ষতিকর দিক বিদ্যমান। মশার বেপরোয়া তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, যেখানে মশা মারার জন্য ‘ফগার সার্ভিস’ দেয়া সিটি করপোরেশনের একটি প্রধান দায়িত্ব, সেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যেক বাড়ি থেকে ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে তবেই ‘ফগার সার্ভিস’ দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, যে বাড়ি থেকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি, এর আশপাশেও মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। রাজধানীর আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নং সেকশন প্রভৃতি এলাকা থেকে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানীর জনৈকা গৃহবধূ বলেন, বিপুলসংখ্যক বড় বড় মশা তাদের এলাকায় বিকেল থেকে তাণ্ডব শুরু করে। মশার নির্বিচার কামড়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ। দিনদুপুরে ঘুমাতে হলেও মশারি টাঙাতে হয়। মশার জ্বালায় শিক্ষার্থীদের টেবিলের বদলে মশারির ভেতরে বসে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ঘরের মধ্যে কোথাও বসলে ইলেকট্রিক ব্যাট রাখতে হয় মশা তাড়ানোর জন্য। জানা গেছে, কয়েক মাস আগেও প্রায় সময় সিটি করপোরেশনের লোকেরা ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটিয়ে যেত। এখন মশা অনেক বেড়েছে; কিন্তু সিটি করপোরেশনকে এ ব্যাপারে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। কোনো কোনো এলাকায় লোকেরা বেলা ৩টা না বাজতেই বাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। কিন্তু কোনো বিশেষ প্রয়োজনে দরজা বা জানালা সামান্য খোলা হলেই সাথে সাথে মশা ঢুকে যায়। অন্যদিকে, দীর্ঘক্ষণ দরজা ও জানালা বন্ধ রাখা ঘরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সারাক্ষণ মশার জ্বালায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মশার ওষুধ দেয়ার তৎপরতা ইদানীং কমে গেছে। মশার ওষুধ দেয়ার ‘বিনিময়ে’ টাকা আদায়ের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক ভবনের কেয়ারটেকার ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের এ টাকার কথা বললে তারা অবাক হন এবং উল্টো দোষারোপ ও সন্দেহ করেন কেয়ারটেকারকেই। কারণ, তাদের ধারণাÑ সে মিথ্যা বলে টাকা নিতে চাচ্ছে। অথচ তাকে অনেক কষ্টে সামান্য টাকা জোগাড় করে সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ দেয়ার লোকজনকে আনতে হয়েছে।
নগরবাসীর প্রত্যাশা, মশার ক্রমবর্ধমান তাণ্ডব থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে সব অন্যায় অনিয়ম পরিহার এবং দুর্নীতি অসততা দমন করা হবে। অন্যথায় জনগণের কোটি কোটি টাকাই কেবল গচ্চা যাবে। নগরবাসী কখনোই স্বস্তিকর পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement