আমেরিকা গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে কাজ করে থাকে। কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে তারা বিশ্বব্যাপী এই কর্মকাণ্ড চালায়। মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি) নামে সে দেশের একটি প্রতিষ্ঠান দরিদ্র দেশগুলোতে গণতন্ত্র উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে। তারা কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এ কাজ করে। নগদ অর্থে তাদের অনুদানের আকার বড় নয়। কিন্তু তারা যেসব মান অর্জনের শর্ত রেখেছেন সেগুলো আমাদের দেশের গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০-২১ সালের জন্য তাদের তৈরি করা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে দুর্নীতি সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থা তলানিতে। এমন অবস্থা পরিবর্তন করে দেশে গণতন্ত্রের ইতিবাচক ধারা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে জোর তাগিদ থাকা দরকার।
এমসিসি কোনো একটি দেশের গণতন্ত্রের আবহ মূল্যায়নের জন্য ২০টি নির্দেশক স্থির করেছে। এর মধ্যে ১৩টি সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে রেড জোনে বা নাজুক অবস্থায়। দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা, বাণিজ্য নীতিমালা, তথ্য প্রাপ্তির স্বাধীনতা, অর্থনীতিতে নারী ও পুরুষের সমতা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে দেশে। রাজনৈতিক অধিকার ও বেসমারিক লোকের স্বাধীনতাও রয়েছে রেড জোনে। এসব ব্যাপারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতাও একই। মেয়েশিশু ও পথশিশুদের অধিকার রক্ষাও দুরবস্থায় রয়েছে। কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকা রাজস্বনীতিও এবার রেড জোনে উঠে এসেছে।
তাদের নির্দেশক মানদণ্ডে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো অতটা নাজুক নয়। সূচকের সবুজ এলাকায় থাকা ওই সব ক্ষেত্র হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, টিকা দেয়ার হার, শিশুস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সরকারের কার্যকারিতা, ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ এবং ব্যবসার শুরু। বাস্তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খুন, গুম ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে নিয়মিত ঘটছে। সিলেটে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে স্থানীয় এক যুবককে এক মাস আগে হত্যা করা হয়েছে। তার কিছুদিন আগে সামরিক বাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও পুলিশ নির্দয়ভাবে হত্যা করে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা ঠুনকো অবস্থায় রয়েছে তা আন্দাজ করা যায়।
টিকাদান কর্মসূচি ও শিশুস্বাস্থ্যের মতো সামাজিক সেবার কর্মকাণ্ড এ দেশে দীর্ঘ দিন ধারাবাহিকভাবে চলছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চলা এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডে দুষ্টু রাজনীতির প্রভাব সেভাবে পড়েনি। এসব ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতিরও সুযোগ কম। তাই অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভালো সেবা পেয়ে আসছে। তবে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের নেতিবাচক প্রভাব এসব ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে পড়লে এসব খাতের সেবা থেকেও মানুষ বঞ্চিত হবে। অন্য দিকে মেয়েশিশুদের পড়াশোনা, পথশিশুদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো সামাজিক কর্মকাণ্ডে এখনো আমরা পিছিয়ে রয়েছি বলে সূচকের মনদণ্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে।
এমসিসির সূচক প্রণয়নে বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রভাব নেই। সরকারের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ সূচক তারা তৈরি করেনি। তারা সম্পূর্ণ নিজেদের সূত্রে তথ্য যাচাই-বাছাই করে এই ইনডেক্স তৈরি করেছে। তাই দেশের গণতান্ত্রিক আবহের প্রকৃত চিত্র এতে ফুটে উঠেছে বলে মনে করাই যায়। বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির সদস্যরাও দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন নেতিবাচক অবস্থায় পড়েছে বলেই মনে করেন। আমরা আমেরিকার কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন ও চিন্তাভাবনা অত্যাবশ্যকভাবে গ্রহণীয় মনে করি না। তবে দেশ শাসনের ব্যাপারে আমাদের যে ঘাটতি রয়েছে সেগুলো তাদের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ সূচকে উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, একবিংশ শতাব্দীতে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে উল্লিখিত সেক্টরগুলোতে বাংলাদেশের যথেষ্ট উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও একই ধরনের অনুভূতি কাজ করে। দুর্নীতি কমানো, নাগরিক স্বাধীনতা অটুট রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন অবশ্যই করা দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা