২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্যানিটাইজার থেকে আবার আগুন

করোনাকালে বিশেষ সতর্কতা জরুরি

-

করোনা মহামারীর এ সময়ে স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশকের গুরুত্ব ও ব্যাপক ব্যবহার সবার জানা। এটি প্রধানত ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল দ্বারা তৈরি করা বলে অত্যধিক উদ্বায়ী ও দাহ্য। অর্থাৎ খোলা জায়গায় রাখা হলে তা বাতাসে উবে যায় এবং এটি সহজেই আগুনকে আকৃষ্ট করে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। গত কিছু দিনের মধ্যে রাজধানীতে স্যানিটাইজার থেকে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এক ঘটনায়, একজন চিকিৎসক স্যানিটাইজার হাতে লাগিয়ে রান্নাঘরে যেতেই চুলার আগুন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে তার দেহ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়। সর্বশেষ, গত বুধবার ভোরে ঢাকার হাতিরপুলের বাসায় মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হলেন চিকিৎসক দম্পতি রাজীব ও অনুসূয়া ভট্টাচার্য। রাজীবের শরীরের ৯০ শতাংশ এবং স্ত্রীর শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ডা: রাজীবের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন।
পত্রিকার খবর মোতাবেক, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ও প্রখ্যাত বার্ন স্পেশালিস্ট ডা: সামন্ত লাল সেন জানান, বুধবার ভোর ৪টায় এই দম্পতিকে হাসপাতালে আনা হয় এবং রাজীবকে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্টে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক এবং স্ত্রী অনুসূয়া রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। রাজীব স্যানিটাইজার ঢালতে গেলে খানিকটা নিচে পড়ে যায়। পরে সিগারেট বা মশার কয়েলের আগুনে থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হয় এবং তার শরীরেও আগুন ধরে গিয়েছিল। স্ত্রী তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও হন অগ্নিদগ্ধ। শিশুকন্যা অন্যত্র থাকায় সে প্রাণে রক্ষা পায়। রাজীবের বোন বলেছেন, ‘ডাক্তাররা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন সৃষ্টিকর্তার করুণার ওপর স্বজনরা ভরসা করে আছেন।’ প্রবীণ চিকিৎসক ডা: সামন্ত লাল স্যানিটাইজার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অ্যালকোহল থাকায় এটি অত্যধিক দাহ্য; অর্থাৎ সহজেই আগুন ধরে যেতে পারে।
বিশেষত, বিগত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভয়াবহ ভাইরাস করোনার করাল গ্রাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের কোটি কোটি মানুষ নিপতিত। এই মারাত্মক জীবাণুঘটিত মহামারীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষকে সর্বত্র বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হচ্ছে; অতিক্রম করতে হয় জীবাণুনাশক তোরণ বা কক্ষ। তা ছাড়া মাস্ক বা মুখোশ, দস্তানা বা গ্লাভস, বিশেষ ধরনের চশমা অথবা মুখমণ্ডল ঢাকার ‘ফেসশিল্ড’, পুরো মাথার চুল আবৃত করার আবরণী, দীর্ঘ পোশাকতুল্য অ্যাপ্রোন প্রভৃতি পরিধান করে থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকেই পরছেন ডাবল মাস্ক এবং সারাক্ষণ ঢেকে রাখছেন মাথা-মুখ। করোনাঘটিত ও প্রাণঘাতী ‘কোভিড-১৯’ নামের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী বা অতিমারি থেকে নিজেকে বাঁচানোর উপকরণ পিপিই বা ‘ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী’ নামে পরিচিত। দেশের বাজারে নিম্নমানের পিপিইর বিক্রয় ও মজুদের কয়েকটি ঘটনার পাশাপাশি এটাও সত্য, বাংলাদেশের বহু গার্মেন্ট কারখানায় বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদন করা হচ্ছে। এগুলো রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনার পাশাপাশি অজ্ঞতা অসতর্কতার দরুন স্যানিটাইজার থেকে আগুন লাগা এবং পিপিই বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের সর্ববিধ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে এবং সমস্যাগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে শঙ্কার হেতুর অবসান ঘটাতে হবে।
করোনাকালের চলমান দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসমেত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ছাড়াও স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং পিপিই বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে সবিশেষ সতর্কতা থাকতে হবে সবার। অন্যথায় সামান্য অসচেতনতাও ডেকে আনতে পারে আকস্মিক বড় বিপদ।


আরো সংবাদ



premium cement