২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাহাড়ে আবারো প্রতিপক্ষের ওপর হামলা

সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো নিষ্ক্রিয় করা দরকার

-

পাহাড়ে আবারো ব্রাশফায়ার করে জনসংহতি সমিতির একপক্ষের ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছে হত্যার শিকার জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী গ্রুপ। বাংলাদেশের বৃহৎ এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে শান্তি ফিরে আসেনি। স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে বিচ্ছিন্নতাকামীদের সন্ত্রাসে দীর্ঘ দিন বিশাল এলাকা তটস্থ ছিল। অন্য দিকে, সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এক ভিন্ন ধরনের তৎপরতা। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। বিভিন্ন স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতার কারণে সেখানকার পরিবেশ সবসময় উত্তপ্ত হয়ে থাকে।
জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম দীর্ঘ দিন ধরে চালিয়েছে। তার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর হলো। এর ফলে পাহাড়ে জেএসএসের ত্রাস কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। তা বেশি দিন টেকসই হয়নি। এর প্রধান কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক একটি অশুভ স্বার্থের হিসাব-নিকাশ। রাজনীতির আড়ালে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর নিজেদের মধ্যে নানামুখী স্বার্থ নিয়ে শুরু হয় কোন্দল। দলের মধ্যে ভাঙনে নতুন দল সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ অপরপক্ষকে বিতাড়িত করার জন্য থেকে থেকে সেখানে ভয়াবহ রক্তপাত হচ্ছে। একপক্ষের প্রতি অপরপক্ষের হামলা বড়ই মর্মান্তিক। ঘাপটি মেরে থেকে ব্রাশফায়ারে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী অংশের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে এ হামলা হয়। তার নেতৃত্বে বান্দরবানে গত মার্চ মাসে সংস্কারপন্থী কমিটি গঠিত হয়। এ ধরনের নতুন কমিটি বা রাজনৈতিক আলাদা কোনো গোষ্ঠীর যখন আর্বিভাব ঘটে, সেখানে সন্ত্রাসের আশঙ্কা দেখা দেয়। ঘটনার দিন সকালে দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ রতনের বাসায় খাবার রান্না করছিল। পাঁচ-সাতজনের একটি গ্রুপ অতর্কিত তাদের ব্রাশফায়ার করে। টানা ১০ মিনিট চলে তাদের গুলি। রতনসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরো দু’জনসহ মোট ছয়জন প্রাণ হারায়। সংগঠনের আরো দুই সদস্যসহ তিনজন আহত হয়।
একপক্ষ অন্যপক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করার এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ২০১৭ সাল থেকে বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর আগে জেএসএসের সাথে দৃশ্যপটে ইউপিডিএফ নামে অন্য একটি আঞ্চলিক দলকে দেখা গেছে। দুই দলের মধ্যে টানা পাল্টাপাল্টি সন্ত্রাসের ঘটনা কয়েক বছর ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগাম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে পাহাড়ি দলগুলো বরাবরই নিজেদের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করেছে। এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অবৈধ আয়ের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ঘটনাটিও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘটিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র থেকে সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে। নিজেদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ হলে এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিপক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করে পুরো সুযোগ নিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সেখানে ঘটছে।
দীর্ঘ দিন ধরে রক্তারক্তির ঘটনা টানা চললেও সন্ত্রাসীদের দমনে সফল হওয়া যায়নি। ঘটনার কারণ উদঘাটন করে পক্ষগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা এখন একান্ত প্রয়োজন। একটি ঘটনা ঘটার পর চার দিকে কিছুটা হইচই হয়। তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। এরপর আবার একই ধরনের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে। সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া গেলে এমনটি পুনঃপুন হওয়ার কথা নয়। বরং সেখানকার সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া রয়ে গেছে। বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য বিবদমান সস্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার কর্মসূচি থাকা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement