২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে করোনার মোকাবেলা

সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এখনই নিতে হবে

-

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর গত এক মাসে ১৬৪ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন, বাকি ৭৮ জন চিকিৎসাধীন। আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আগের তুলনায় খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনা করলে করোনার প্রকোপ বেশি এমন দেশগুলোর মৃত্যুর হারের কাছাকাছি চলে গেছে বাংলাদেশ। আইইডিসিআরের দেয়া প্রতিদিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পর দেশে তিন দিন ধরে অনেকটা জ্যামিতিক হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লোকজনের বাড়ি যাওয়া, গার্মেন্ট খুলে তাদের ঢাকায় ফেরার পর আবার বন্ধ ঘোষণা এবং তাদের ফেরত যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। কিন্তু ঠিক কতটা ছড়িয়েছে পরীক্ষা না করলে তা বোঝা যাবে না। তাই এখন দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত করতে বেশি বেশি পরীক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও গত সোমবার পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশেই ঘরে থাকার নির্দেশনা মেনে চলায় ছিল ঢিলেঢালা ভাব। রাজধানীতে প্রধান সড়কে কিছুটা কম হলেও ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল। অলিগলিতে মানুষের চলাচলও ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। দোকানপাটও ছিল খোলা। সারা দেশে কার্যত লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও উদ্বেগ দেখা দেয়। ফলে শ্রমিকদের অনেকে রাজধানীতে চলে আসায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের এই নির্দেশনা প্রতিপালন কার্যত উপেক্ষিত হয়েছে।
ঢাকার মহাখালীতে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা আগামী ১৫ দিন দেশে করোনাভাইরাস বিস্তারে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে আশঙ্কা তুলে ধরেছেন। সরকারকে তারা জানিয়েছেন, দেশের সামনে কঠিন সময়। চিকিৎসকরা বলেছেন, সারা দেশে এখনই লকডাউন জারি করা জরুরি। কারণ কমিউনিটিতে করোনার সংক্রমণ ঘটছে। তাদের মতে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের উপরে, যা মহামারী আক্রান্ত দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এক দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে এখন ‘উচ্চ সতর্কতা’ গ্রহণ করতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী। সেভাবে প্রস্তুতি না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। দেশের সামনে কঠিন সময় আসছে। লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এখনই দেশে শক্ত অবস্থান নেয়া প্রয়োজন।
বিলম্বে হলেও সরকারের কিছুটা বোধোদয় হয়েছে বলে মনে হয়। জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রশাসন গত সোমবার বিকেল থেকে শক্ত অবস্থান নেয়ায় মানুষজন ঘরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে গত সোমবার সন্ধ্যার পর কাঁচাবাজার বা দোকান খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সুপারশপ ও বড় বাজারগুলো খোলা রাখা যাবে। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান খোলা থাকবে বেলা ২টা পর্যন্ত। তবে ওষুধের দোকানসহ জরুরি সেবা খাতগুলো চালু থাকবে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনেও সন্ধ্যার পর থেকে ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি মসজিদসহ কোনো ধরনের ধর্মীয় উপাসনালয়ে না গিয়ে বাসায় নামাজ ও প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।
সব কিছু বিবেচনায় এ কথা বলা যায়, উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্য ততটা টেকসই নয়। যেখানে উন্নত দেশগুলোই করোনা মোকবেলায় হিমশিম খাচ্ছে; সেখানে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অবস্থা কী হতে পারে তা সবার কাছে অনুমেয়। করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধে আমাদের এখনো সর্বোত্তম হাতিয়ার হলো যেকোনোভাবেই হোক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আক্রান্তদের সাধ্যমতো চিকিৎসার আওতায় আনা। মনে রাখতে হবে, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর বিষয়ে গাফিলতি করার সময় ফুরিয়ে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement