২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নদী বাঁচাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

এক দশকেও থামেনি দখল

-

দখল করে দেশের নদীগুলোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে কার্যত আমাদেরও মৃত্যু ডেকে আনা হচ্ছে। নদীগুলো মরে গেলে দেশবাসীকেও মরতে হবে, এ ধরনের সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন অনেকেই। তাই জনস্বার্থে অবিলম্বে নদী দখল ঠেকাতে হাইকোর্টকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। জারি করতে হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ। কিন্তু এরপর এক দশক পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না বলেই মনে হয়; বরং সময়ের সাথে নদী দখল আরো জোরেশোরে চলছে বহু স্থানে। আসলে এর মাধ্যমে আমরা নদীগুলোর মৃত্যু ঘটানোর কাজটিই নিশ্চিত করছি, যা কার্যত আমাদের নিজেদের মৃত্যু ঘটানোরই শামিল।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে হাইকোর্ট রুল জারি করে বলেছেন, জলাশয়গুলোকে জীবন্ত সত্তার মর্যাদা দিতে হবে এবং এগুলো হবে ‘বৈধ জীবন্ত সত্তা’। এটি ছিল দেশের নদী ও জলাশয়গুলো বাঁচানোর জন্য উচ্চ আদালতের ১৭ দফা নির্দেশনার অংশ। এতে নদী দখল ও দূষণের পথে বাধা সৃষ্টি করা হয় এবং এসব অপরাধকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই নির্দেশনায় আরো উল্লেখ করা হয়, সব নদীর বৈধ অভিভাবক হিসেবে একটি ‘জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন’ গঠনের জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। আরো উল্লেখ করা হয়, সব ধরনের নদী দখলকারীদের অবৈধ ঘোষণা করতে হবে নির্বাচনে অংশ নেয়া ও ঋণ নেয়ার ব্যাপারে।
এর ১০ বছর পর আজো সেই ১৭ দফা নির্দেশনার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিংবা এগুলো এমনভাবে কার্যকর করা হয়েছে, যা এই রায়ের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ। বাস্তবে দেখা গেছে, ব্যাপক নদী দখল ও দূষণে ঢাকার চারটি প্রধান নদীতে বিশুদ্ধ খাবার পানির বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
দেশের শীর্ষ আদালত ২০০৯ সালে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন ঢাকার মূল চারটি নদীর মূল এলাকা চিহ্নিত করতে। এই নদীগুলো হচ্ছেÑ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। এসব নদীর এলাকা চিহ্নিত করে দখল হওয়া জমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে নদীগুলো মূল অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে নদীগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ সরকার এগুলোর দখল না ঠেকিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেÑ এটি ছিল আদালতের পর্যবেক্ষণ।
সরকারের প্রথম কাজটি ছিল নদীগুলোর সীমানা চিহ্নিতকরণ। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষই নদীগুলোর সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত করেনি। জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, ভূমি জরিপ অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতর স্বীকার করেছে, সিএস রেকর্ড ও মানচিত্র দেখে কাজটি করা সম্ভব ছিল। সে অনুযায়ী আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এ কাজে সিএস রেকর্ডগুলোকে প্রাথমিক উৎস হিসেবে নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হাইকোর্ট যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তার কতটুকু সরকার বাস্তবায়ন করেছে?
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জের ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নদী জরিপ সম্পন্ন করার জন্য। এ জন্য ভিত্তি দলিল ধরার কথা সিএস ও আরএস রেকর্ডকে। জরিপ অধিদফতরকে বলা হয়েছিল ২০০৯ সালের মধ্যে জরিপ সম্পন্ন করতে। এরপর বলা হয়েছিল বৈধভাবে লিজ নেয়া জমি ছাড়া এসব নদীর বাকি জমি চিহ্নিত করে বাউন্ডারি পিলার বসাতে হবে ২০১০ সালের নভেম্বরের মধ্যে। এরপর এসব জমি সরকারের অধীন ও নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি নিরঙ্কুশ করতে হবে। কিন্তু কাজটি নিয়ে আছে নানা বিতর্ক এবং অনেক কাজ রয়েছে অসম্পূর্ণ।
বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও হাইকোর্টের এসব নির্দেশ বাস্তবায়নে যাদের ব্যর্থতা রয়েছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নইলে কোনো দিনও নদী দখলের অপকর্ম বন্ধ হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement