বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে একধরনের অবাধ দুর্নীতি। এসব দুর্নীতি নিয়ে মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যমে সরগরম আলোচনা-সমালোচনা চলে। কোনো কোনো সময় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সংসদীয় কমিটি দুর্নীতি নাশে উপহার দেয় কিছু সুপারিশমালা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, গত এক দশক ধরে এসব সুপারিশ ব্যাংক খাতে থেকে যাচ্ছে অবাস্তবায়িত। এ থেকে এটুকু স্পষ্ট হয়ে যায় ব্যাংক খাতের দুর্নীতির অবসান ঘটাতে সরকার প্রতিশ্রুতিশীল নয়। তা ছাড়া যেসব কর্তৃপক্ষ এই অবাধ দুর্নীতি ঠেকানোর দায়িত্বে নিয়োজিত, তারাও চায় না আর্থিক খাতে চলমান দুর্নীতি বন্ধ হোক।
সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আর্থিক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে অনেক সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে আছে, স্বল্প পরিচিত হলমার্ক গ্রুপের সোনালী ব্যাংক থেকে নেয়া তিনি হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুটপাটের পর উদ্ধার করার সুপারিশ। সোনালী ব্যাংক থেকে এই টাকা নেয়ার তথ্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০১২ সালে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই টাকা উদ্ধার করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। কিভাবে স্বল্প পরিচিত একটি গ্রুপ এত বিপুল অঙ্কের ঋণ সোনালী ব্যাংক থেকে নিতে পারল, কারা এর জন্য দায়ী তা আজো জাতি জানতে পারল না। একইভাবে ২০১০-১১ সালের শেয়ারবাজার ধসের কেলেঙ্কারির বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা হয় জাতীয় সংসদ ও সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল সময়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যখন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি, তখনো সংসদ ও সংসদীয় কমিটিতে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বর্তমানে দেশের অর্থমন্ত্রী। গত জানুয়ারি থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরও আজ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক হলমার্কের তসরুপ করা একটি টাকাও আদায় করতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন, এখনো তিনি ওই টাকা আদায়ের ব্যাপারে তার পূর্বাবস্থায়ই দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ওই টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে চুরি করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ওই টাকা উদ্ধার করতে হবে।
দেশের সাধারণ মানুষও চায় এমনটিই। তারা চায় শুধু সোনালী ব্যাংক নয়, অন্যান্য আরো ব্যাংক থেকে যেসব টাকা কার্যত চুরি করা হয়েছে তা আদায়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ওই টাকা আদায় করতে আমাদের আর কত দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ভুয়া ঋণগ্রহীতার নামে বেসিক ব্যাংক থেকে ছয় হাজার কোটি তসরুপের জন্য দায়ী ওই ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তিদানের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। এ ধরনের অভাবনীয় ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে একসময়ের সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক বেসিক ব্যাংককে দেউলিয়া ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। গত ৫ বছর ধরে ব্যাংকটির কু-ঋণের হার অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৮ শতাংশে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, যিনি এখন কৃষিমন্ত্রী, বলেছেনÑ শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষে সরকারি সংস্থাগুলোর জবাবদিহি আদায় করা মুশকিল হবে।
তার এই বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়, ব্যাংক খাতের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি নাশে সরকারের কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও নেই। এর ফলে বর্তমান সরকারের ব্যাংক খাত নানা সঙ্কটে নিপতিত।
আমরা মনে করি, সরকারকে ব্যাংক খাতের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটাতে জোরদার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক খাতের দেউলিয়াপনা আরো বেড়েই চলবে। মূলধন ঘাটতি স্থায়ী রূপ নেবে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। তখন বছর বছর করের টাকা দিয়ে এসব ব্যাংককে জিইয়ে রাখতে হবে, যা চলছে বিগত কয়েক বছর ধরে। এখন চূড়ান্ত সময় এসেছে এ ব্যাপারে কার্যকর কিছু করার। আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে সঠিক উপলব্ধি নিয়ে দ্রুত কাজে নামবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা