২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

বাড়বে উৎপাদন খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয়

-

আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে বিইআরসি গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বাড়াতে যাচ্ছে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ। অর্থাৎ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুযায়ী, তা বাড়ানোর ফলে নতুন দাম হবে বর্তমান দামের দ্বিগুণেরও বেশি। এর নেতিবাচক প্রভাব নিশ্চিতভাবে পড়বে সব খাতে।
এ দিকে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সর্বসাম্প্রতিক প্রস্তাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশের ব্যবসায়ী মহল। বিশেষ করে গ্যাসনির্ভর শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এ উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। কেননা, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়াবেন। ফলে রফতানির ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এতে রফতানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশের শিল্পকারখানাগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। অন্য দিকে, পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেভাবে না বাড়ার কারণে তাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। এতে অভ্যন্তরীণভাবে দেশে পণ্যচাহিদা কমে যাবে। ফলে শিল্প খাতে এর আঘাত পড়বে। মোট কথা, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সব খাতে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেনÑ ভোক্তা, উদ্যোক্তা এবং বিদেশী ক্রেতাদের একসাথে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ নেয়ার সক্ষমতা নেই। তা ছাড়া, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে তা চাপ সৃষ্টি করবে মূল্যস্ফীতির ওপর। এ আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, শিল্প খাতে মৌলিক কাঁচামালের মতো কাজ করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ। ফলে ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা পণ্যের বাজারে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা বিশেষত ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের রফতানি বাজারকে। একইভাবে মানুষের জীবনমানের ওপর অভিঘাত সৃষ্টি করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে শিল্প খাতের বিকাশ রুদ্ধ হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। দেউলিয়া হবেন অনেক উদ্যোক্তা। তাদের বক্তব্য, গত ১০ বছরে ছয়বার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। বিইআরসির নিজস্ব আইন অনুযায়ী, বছরে একবারের বেশি গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। অথচ নিয়ম ভেঙে তা করা হচ্ছে।
তা ছাড়া প্রশ্ন উঠেছে, এক দিকে গ্যাস খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার কর ছাড় দেয়া হচ্ছে, অপর দিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছেÑ এটি যৌক্তিক হতে পারে না। জানা গেছে, গ্যাসের মূল্য সহনীয় রাখতে চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ১৫ হাজার কোটি টাকার কর ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট বাবদ এ ছাড় দিয়েছে সংস্থাটি। এক দিকে, বিপুল কর ছাড়, অন্য দিকে পেট্রোবাংলার অধীন বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম ১০২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে চলছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি। গত বৃহস্পতিবারও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গণশুনানির পরামর্শগুলো কর্তৃপক্ষ আমলে নেয় না এমন অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। এ সিদ্ধান্তের আগে কর্তৃপক্ষ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। এমন সিদ্ধান্ত যেন না আসে, যা আমাদের সার্বিক শিল্প খাত ও সাধারণ মানুষের জীবন মানের ওপর নেতিবাচক অভিঘাত সৃষ্টি করে।


আরো সংবাদ



premium cement