২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘নাগরিকত্ব’ যাচাইয়ের নামে আসামে কী হচ্ছে?

বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট অবস্থান চাই

-

আসামে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে ভারত সরকারের কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ লোক শনাক্ত করা হয়েছে যারা আসামের নাগরিক হিসেবে ‘প্রমাণ দিতে পারেনি’। আসলে সরকার এমন কিছু মান নির্ধারণ করেছে, যে মান অনুযায়ী এই চল্লিশ লাখ নাগরিক উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বাংলাভাষী এই মানুষেরা যদি ভারতের নাগরিক না হয়, তাহলে কোন দেশের নাগরিক, সেটা তারা স্পষ্ট করেনি। ভারতের বাংলাভাষী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অভিবাসন একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া। হাজার হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতার এটি একটি অনিবার্য প্রবাহ।
ভারতের এমন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। অথচ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ থাকার দুর্বোধ্য নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। স্মর্তব্য, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করা হলেও শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসেছে। ভারতের পার্শ্ববর্তী বাংলাভাষী কোনো দেশ নেই বাংলাদেশ ছাড়া। সুতরাং এই ৪০ লাখ বাংলাভাষী অসমীয়কে শেষ পর্যন্ত কোন দেশে পুশইন করার অপচেষ্টা হবে তা সহজেই অনুমেয়। এই কাজটি ভারত বাংলাদেশ অভিমুখে বহুবার করেছে বিভিন্ন সময়ে।
অত্যন্ত উদ্বেগজনক এ বিষয়ে বাংলাদেশ একেবারে চুপ থাকলেও কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেছেন, আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকা তৈরি করা বাংলাদেশের জন্য অপমানের। এ ব্যাপারটি তার জন্য একটি রাজনৈতিক ইস্যু হলেও এতে করে বাংলাদেশ যে বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে সেটা অনুমান করা যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্র। নাগরিক নিবন্ধন তালিকা তৈরি করা নিয়ে যা চলছে, তাতে ওই দেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে। চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় ৪০ লাখ লোকের নাম ওঠেনি, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ বলে রটনা করা হচ্ছে; তা মিথ্যা। বাংলাদেশ বন্ধু ও প্রতিবেশী। তাদের বিরুদ্ধে এসব প্রচার গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করবে।’ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাম করে লাখ লাখ বাঙালিকে আসাম থেকে বিতাড়ন করা ঠিক নয়।’ এ অবস্থায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের বক্তব্য প্রায় একই। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, আসামে নাগরিক তালিকা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরো এক ধাপ এগিয়ে তিনি নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনারের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। আমাদের হাইকমিশনার বলেছেন, ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং আসামে এনআরসির কোনো প্রভাব বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর পড়বে না। তবে তিনি এমনটি বলেছেন কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাইকমিশনারের দায়িত্ব নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। সে হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনার তার দায়িত্ব পালন করেছেন। আসামের ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাভাষীদের আসাম থেকে এ দেশে ঠেলে দেয়া হবে কি না তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। এত বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে যদি বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চলে, তা এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
আসামের নাগরিকত্ব বাছাই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত। এ ব্যাপারে এখনই সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করলে তাতে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের চালানো নিপীড়নে প্রথম থেকে বাংলাদেশ দৃঢ় অবস্থান নিতে পারলে আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে থাকার পরিস্থিতি আদৌ সৃষ্টি হতো না। সুতরাং আসাম পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের অবিলম্বে নিজের অবস্থান প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement