২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্কুলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘চোখ ওঠা’ রোগ

-

স্কুলে স্কুলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘চোখ ওঠা’ রোগ। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে সারা দেশেই বেড়েছে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব। অনেক অভিভাবক অধিক সতর্কতায় শিশুদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন ‘চোখ ওঠা’ একটি সিজনাল রোগ। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই রোগ ছড়ানোর কোনো শঙ্কা থাকে না।
অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ অভিভাবক এখন শিশুদের স্কুল ও কোচিং নিয়েই বেশি চিন্তিত। স্কুলগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই কোনো-না-কোনো শিক্ষার্থী চোখ ওঠা রোখে আক্রান্ত। ফলে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও চিন্তিত। কেননা অতি ছোঁয়াচে এ রোগ সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের জন্য। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চোখ ওঠা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাসের একজনের চোখ উঠলে তা দ্রুত অন্যদের মাঝে ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় কিছু স্কুল সাময়িক বন্ধও রাখা হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংক্রমণ কমাতেই স্কুল বন্ধ বা আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে ছুটি দিয়ে বাসায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে।


অন্য দিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা অবশ্য অভয় দিয়ে বলছেন, চোখ উঠলে চিন্তার কিছু নেই। এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা পাঁচ দিন আর প্রাপ্তবয়স্করা সাত বা সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে (আলাদা) থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক জানান, হঠাৎ করে তার স্কুলে শিশুদের মধ্যে চোখ ওঠা শুরু হয়েছে। একজন থেকে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক শিশু চোখব্যথা ও মাথাব্যথার কথা বলে কান্নাকাটি করছে। আক্রান্তদের ছুটি দিয়ে বাসায় থাকতে বলা হয়েছে।
কয়েকজন অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, চোখ উঠলে কখনো কখনো এক চোখে অথবা দুই চোখেই জ্বালা করে এবং লাল হয়ে চোখ ফুলে যায়। চোখ জ্বলা, চুলকানি, খচখচে ভাব থাকা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখে বারবার সাদা ময়লা আসা, কিছু ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে কনজাংটিভাইটিস বা রেড/পিংক আই বলা হয়। এ সমস্যাটি ‘চোখ ওঠা’ নামেই বেশি পরিচিত। কনজাংটিভা নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। রোগটি অতি ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রুত ছড়াতে সক্ষম।


চোখ ওঠা রোগ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা: মো: জাফর খালেদ বলেন, শিশুদের চোখ ওঠার হার বেড়েছে। এটি একটি ভাইরাস, যা করোনার মতো ছড়াচ্ছে। একজন আক্রান্ত হলে সংস্পর্শে থাকা অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রকোপ তিন থেকে ছয় মাস থাকতে পারে। তবে এর সংক্রমণ সক্ষমতা দু-তিন মাস স্থায়ী হবে। এ সময়ের মধ্যে যারা কন্ট্রাকে আসবে তারা আক্রান্ত হবে। যাদের ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা) কম তারাই বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। তবে চোখ ওঠা রোগের একটি ভালো দিক হচ্ছে, অল্প বয়সীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসাপদ্ধতির বিষয়ে তিনি বলেন, কারো চোখ উঠলে তাকে সাথে সাথে আইসোলেশন (আলাদা রাখা) করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত আলাদা রাখা যাবে তত ভালো। এতে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। তবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মতো দরোজা-জানালা বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা ভালো। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস বা একই বাথরুম ব্যবহার না করাও ভালো। চোখের পানি বা বাতাসে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে অন্তত সাত দিন স্কুলে যাওয়া যাবে না।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জরুরি নির্দেশনা
বিদেশগামী যাত্রীদের চোখ ওঠার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে বিদেশ না যেতে অনুরোধ জানিয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এক অফিস আদেশে বিদেশগামীদের জন্য এমন অনুরোধ জানানো হয়। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement