২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফুটেছে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি

মহাদুর্যোগেও থেমে নেই প্রকৃতির রূপবিন্যাস
-

বৈশাখের আকাশে গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। করোনার সংক্রমণ-আক্রান্ত-মৃত্যু আতঙ্কের সূচকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। আর লকডাউন-নিষেধাজ্ঞায় যেন থমকে আছে বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী মানবসমাজে এই দুর্যোগ চলছে, কিন্তু থেমে নেই প্রকৃতির রূপ বিন্যাস। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় চলেছে ঠিক একই নিয়মে, একের পর এক। প্রকৃতির সেই নতুন রূপের কিছুটা রেশ পড়েছে কৃষ্ণচূড়ার মাঝেও। করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বদলে গেছে জীবনধারা। ক্রান্তিকালে বেড়েছে মানুষের ঘরে থাকার প্রবণতা। এরই মাঝে সবুজ ও সতেজতার পূর্ণতা নিয়ে পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা আবির্ভূত হয়েছে সৌন্দর্যের নতুন রূপে। এখনো কান পেতে শোনা যায় জানালার সামনে গাছে বসা ছোট্ট পাখির দুঃখ জাগানিয়া গান। ফিরে যেতে মন চায় আগের সেই চেনা পৃথিবীতে।
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’Ñ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গান আমাদের মনে করিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের নি®প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। যেন লাল রঙের পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। এই সময়টায় সারা দেশের মতোই মানিকগঞ্জে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য।
কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক পাওয়া ভার। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। অনেকটা জায়গাজুড়ে এটি শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। এর নাম নিয়ে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা, রাঁধা ও কৃষ্ণের আথে নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধুমাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ। এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।
সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় সাধারণত ১২-১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় সাত-আটটি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় আট সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন রকম। যেমনÑ দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জুনে, আরব আমিরাতে সেপ্টেম্বরে, ক্যারাবিয়ানে মে থেকে সেপ্টেম্বর, ভারতে এপ্রিল থেকে জুন, অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।
পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘বারসিক’-এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা বিমল রায় জানান, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। ছড়া-কবিতা-গানে উপমা হিসেবে নানা ভঙ্গিমায় এসেছে এই ফুলের সৌন্দর্য বর্ণনা। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও এর কাঠ দামি না হওয়া এবং ভালো ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা।

v


আরো সংবাদ



premium cement
যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

সকল