দর্শনা কেরু চিনিকলের কৃষি খামারে লাগাতার লোকসানের অভিযোগে প্রায় সাড়ে ৩০০ পাহারাদারকে বাদ দেয়া হয়েছে। কাজ হারিয়ে করোনার সময় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। খামারগুলো এখন পাহারাদার শূন্য।
জানা গেছে, কেরুজ কৃষি খামারে গত ৫ বছরে ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এলাকার আখচাষিদের আখ ও কেরুজ খামারগুলোতে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে আখ চাষ করা হয়ে থাকে, যা থেকে প্রায় ২৫ হাজার টন আখ পাওয়া যায়। যার বাজারমূল্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ পরিমাণ আখ উৎপাদন করতে প্রতি বছর কেরুর গড়ে খরচ হয় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রতি বছর এ বাবদ গড়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়। অভিযোগ রয়েছে কৃষি খামারের শিডিউল অনুযায়ী লেবাররা কাজ না করেই অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করে থাকে, বেশ কয়েকবার খামারের সার চুরি, সেটাপ অনুযায়ী খামারে যে পরিমাণ পাহারাদার প্রয়োজন তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পাহারাদারের বিল উত্তোলনÑ এসব কারণে প্রতি বছর খামারের লোকসান বাড়ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে শুধু কেরুজ কৃষি খামারের পাহারাদারের বিল বাবদ প্রতি বছর ২ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রকৃত পক্ষে কোনো পাহারাদারই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে কৃষি খামারে সর্বক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, বছরের পর বছর লোকসান, প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত দৈনিক পাহারাদার দিয়ে কৃষি খামারগুলোতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পায় বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন। ফলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন গত বৃহস্পতিবার দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে ওই দিন দুপুরের পর থেকেই কেরুজ ডিজিএম (ফার্ম) মো: হুমায়ুন কবীর সব ফার্ম ইনচার্জকে জানিয়ে দেন যে আজ থেকে দৈনিক পাহারাদারদের খামারে আসার দরকার নেই। দৈনিক পাহারাদারেরা ফার্ম ইনচার্জদের কাছ থেকে এমন খবর শোনার পর উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
কেউ কেউ আবার হা-হুতাশ করতে থাকে। বাদ পড়া পহারাদাররা সংবাদিকদের জানালেন আমরা দিন হাজিরায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতাম। আমাদের বাদ দিলেই কি লোকসান কাটিয়ে উঠবে?। কেরু চিনিকলের ১০টি কৃষি খামারের মধ্যে ৯টি কৃষি খামারের দৈনিক হাজিরার প্রায় সাড়ে ৩০০ পাহারাদারের কাজ থেকে বাদ পড়লেও কেরুজ আকন্দবাড়ীয়া পরীক্ষামূলক খামারের প্রায় অর্ধশত দৈনিক হাজিরার পাহারাদার কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকেই অভিযোগ করে জানালেন করপোরেশনের নির্দেশ ১০টি কৃষি খামারের জন্য প্রযোজ্য হবে। কিন্তু তা না হয়ে ৯টি খামারের দৈনিক পাহারাদারের কপাল পুড়ল। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আবু সাইদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কৃষি খামারগুলো লাগাতার লোকসান কমিয়ে লাভে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা