করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শুরু হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম। এ জন্য সংস্থাটি কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু গাইডলাইন চূড়ান্ত করেছে। ২৩ ধরনের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে গাইডলাইনে। দুদক সূত্র জানায়, দাফতরিক কার্যক্রম, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ই-ফাইলের ওপর জোর দেয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা অনুসারে করোনার সময়ে চলবে দুদকের সব কার্যক্রম। ৩১ মে কমিশনের অনুমোদনক্রমে এ গাইডলাইন দুদকের বিভাগীয় ও জেলা অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্তের সই করা নির্দেশনায় করোনারোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফতরিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গাইডলাইন বাস্তবায়নে দুদক সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন বিভিন্ন দফতরের সাত মহাপরিচালক।
সূত্র জানায়, দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন, সংস্থাপন ও অর্থ) মো: জহির রায়হানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি ভিজিলেন্স টিম গাইডলাইন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। দুদকের মহাপরিচালক জহির রায়হান বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে একটি গাইডলাইন চূড়ান্ত হয়েছে। গাইডলাইন অনুসরণ করে দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ জেলা পর্যায়ের অফিসগুলো চলবে।
গাইডলাইনের মধ্যে রয়েছেÑ স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও অফিস জীবাণুমুক্তকরণ। রোস্টার করে অফিসে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকবে। প্রতিদিন অফিসে প্রবেশকালীন তাপমাত্রা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। দুদকের প্রতিটি রুম নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান গেট ছাড়া সব গেট বন্ধ থাকবে। অফিসের বাইরের কোনো ব্যক্তিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অফিসে প্রবেশ করানো যাবে না। এরকম ২৩ ধরনের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে গাইডলাইনে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়Ñ অফিসের ফ্রন্টডেস্কে দায়িত্বরত কর্মী ও গেটম্যানসহ সব নিরাপত্তাকর্মীকে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরাপত্তাকর্মী থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে আগতদের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করার দায়িত্ব পালন করবেন।
সভা আয়োজনের আগে জরুরি প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সভা করতে হবে। গুরুত্ব বিবেচনায় সভা আয়োজনের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সভাস্থান জীবাণুমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তঃদফতর সভার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ডিজিটাল মাধ্যমে সভা করতে হবে। প্রয়োজনে সভার আগেই দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে অন্যান্য ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় আরো রয়েছেÑ প্রধান কার্যালয়ের দাফতরিক কার্যক্রম যথাযথ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্র ছাড়া যথাসম্ভব সব সিদ্ধান্ত ই-ফাইলের মাধ্যমে নিতে হবে। এটুআই এর সাথে যোগাযোগ করে বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের যাবতীয় দাফতরিক কার্যক্রম যথাসম্ভব ই-নথিতে পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
এ ছাড়া অফিসে যাতায়াতকালীন যতটা সম্ভব জনসমাগমস্থল পরিহার করতে হবে। ভ্রমণের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কর্মস্থলের বাইরে কাউকে প্রেরণের প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নিতে হবে। দুর্বল, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ কাউকে কর্মস্থলের বাইরে প্রেরণ করা যাবে না। ভ্রমণের সময় মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুদক ক্যান্টিন পরিচালনা করা যাবে। ক্যান্টিনে কোনো চেয়ার ও টেবিল থাকবে না। শুধুমাত্র টেক-আউট হিসেবে খাবার বিক্রি করা যাবে। ক্যান্টিন থেকে খাবার আনার জন্য সবাই যেতে পারবে না, এক বা দু’জনকে খাবার আনার দায়িত্ব দিতে হবে। ক্যান্টিনে ভিড় গ্রহণযোগ্য নয়। ক্যান্টিনের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে ৪ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করবে।