দেশ স্বাধীনের পর এবারই প্রথম পয়লা বৈশাখ বরণে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী পুরাতনের বিদায়ের সাথে নতুন বছর শুরু হলেও তার বরণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না। ১৪২৭ সালের নতুন সূর্যোদয়ের সাথে রমনার বটমূলে গাইবে না ছায়ানট, হবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা। সারা দেশের কোথায়ও থাকবে না বৈশাখী আয়োজনের ছিটেফোঁটা। করোনা পরিস্থিতে বৈশাখ বরণে সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।
সাধারণত প্রতি বছরেই মার্চের ১৪ তারিখে পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ আয়োজনের তহবিল গঠন করা হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি ও শিল্পকর্ম বিক্রি করে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ক্যাম্পাসে কোনো প্রস্তুতি নেই। সেখানে উৎসব আয়োজনের পরিবর্তে চলছে সুনসান নীরবতা।
অন্য দিকে ছায়ানটও প্রতি বছরের মতো এবার বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিলেও করোনা পরিস্থিতিতে তারা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মানুষের স্বার্থে এবং শিল্পীদের স্বার্থে সংগঠনের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের উপদেশ অনুযায়ী অনুষ্ঠানটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জানান, ‘ছায়ানট মানুষের জন্য নিবেদিত সংগঠন। আমরা মনে করি সাধারণ মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়, এবার তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্য থেকে আমরা একটি সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে এদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা অনেকটা আমাদের বৈশাখ আয়োজনে যে খরচ হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে করেছি ছায়ানটের ত্রাণ তহবিল থেকে।’
একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্যান্য সংগঠনও। দীর্ঘ দিন ধরে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করে আসা সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজের প্রধান ফকির আলমগীর জানান, এবার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন। তবে তারা গণমানুষ নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন না। অনুষ্ঠান ধারণ করে টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে অর্থাৎ বিকল্প উপায়ে অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, পয়লা বৈশাখ উদযাপনে তারা কোনো আয়োজন করবেন না। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান জীবনের চেয়ে বড় নয়। মানুষ বাঁচলে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈশাখ উদযাপন করা যাবে। মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা এবার সব বাতিল করেছি।’
এর আগে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবন থেকে দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসকদের ভিডিও কনফারেন্সে নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।
এ দিকে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পয়লা বৈশাখ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৈসাবির সব ধরনের অনুষ্ঠান স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারা দেশে করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে জনসমাগম এড়াতে এই নির্দেশ দেয়া হয় হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখবরণ শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বৈশাখবরণ অনুষ্ঠানটি হয়নি। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়। ২০০১ সালে ভয়ঙ্কর সিরিজ বোমা হামলার পরের বছরও যে আয়োজন বন্ধ হয়নি, করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে স্থগিত করা হলো বর্ষবরণে ছায়ানটের সেই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।