করোনায় নারী-শিশুর নিরাপত্তা ও তহবিল গঠনের দাবি

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো এবং নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে গতকাল উদ্বেগের সাথে বলা হয়, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৪৯ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ৯ দফা দাবিতে তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিøষ্ট সবাইকে নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করুন এবং কর্মপরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা মনে করি, এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে দেশে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের নারী ও শিশুরা। কারণ যেকোনো মহামারীই নারী ও শিশুদের পেছনে ফেলে দেয়। তাই সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা এবং এই সময় নারী ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ফোরামটি।
দাবিতে তারা বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে প্রচুর নারী গৃহকর্মী ও পোশাক শিল্পে কর্মরত কয়েক লাখ নারী সাময়িকভাবে তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। তাই এই সময় নারী গৃহকর্মী, দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে খাদ্যদ্রব্য জোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। সহজলভ্য উপায়ে সারা দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা করা, চিকিৎসাসেবার সক্ষমতা বাড়ানো এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে গিয়ে যেন আমাদের পুরো স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে না পড়ে এবং আমাদের হাসপাতালগুলো যেন প্রসবকালীন জটিলতা-সহ অন্যান্য অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া নারীকেও সঠিক সেবা দিতে পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিদেশফেরত ও সন্দেহভাজন রোগীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করুন। যারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন তাদের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করুন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করুন এবং জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করুন।
ফোরাম বলছে, সরকারি কর্মকর্তা এবং আমাদের সম্মানিত জনপ্রতিনিধিগণ যাতে জনগণের প্রাপ্য সব সুবিধা নিশ্চিত করে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, মহামারীর সময় নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় বাল্যবিয়ের ঘটনাও। তাই এ সময় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে রোধে বিশেষ নজরদারি বাড়ান এবং কোথাও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা ঘটলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ভুক্তভোগীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়াসহ আরো নানান নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রভাব পড়ছে আমাদের শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে। তাই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক পদক্ষেপ নিন এবং করোনাভাইরাস কিভাবে শিশুদের জীবনকে প্রভাবিত করে, সেটি সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য তাদেরকে সম্পৃক্ত করে কাউন্সিলিং কর্মসূচি শুরু করুন। প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুরা যাতে করোনাভাইরাসের কারণে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করুন।