২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কক্সবাজারে লক্ষাধিক পর্যটকের ফুটপাতে রাতযাপন

কক্সবাজারে লক্ষাধিক পর্যটকের ফুটপাতে রাতযাপন - ছবি : নয়া দিগন্ত

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে টানা তিন দিনের সরকারি ছুটির সুযোগে অবকাশযাপনের জন্য কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা। পর্যটকের পাশাপাশি সৈকতে ভিড় করেছে স্থানীয়রা কর্মব্যস্ত মানুষ। পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র, রাস্তাঘাট ও বিপণী কেন্দ্রগুলো। গত ১৫ দিন আগেই অগ্রিম বুকিং হয়ে পূর্ণ হয়ে যায় হোটেল-মোটেল-কটেজ ও গেস্ট হাউজগুলো। ফলে রাতে হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক।

জানা যায়, টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় দুই লাখ পর্যটক। শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে এখন ‘ঠাঁই নেই’ অবস্থা।

হোটেল মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ সূত্র মতে, শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বন্ধ যুক্ত হওয়ায় এবার রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তবে এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে
কাপল বেড ও টুইন বেডে সর্বোচ্চ দু'জন অবস্থান করতে পারছেন। এতে লক্ষাধিক পর্যটক রুম পেয়েছেন। অর্ধ-লক্ষাধিক পর্যটক স্বজনের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। আরো লক্ষাধিক পর্যটক রুম না পেয়ে হতাশ। শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল মোটেল জোনের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গ্রুপভিত্তিক আগত দেড় শতাধিক পর্যটক। তারা সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও রুম পাননি। এখন ভরসা শুধুই ফুটপাত। এরকম বিভিন্ন পয়েন্টে লক্ষাধিক পর্যটক সড়কের পাশে অবস্থান করছে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মুমিনুল হক জানান, ছুটি পেয়ে খুশি হয়েছিলাম বন্ধু-বান্ধব মিলে বেড়াতে এলাম। কিন্তু রুম না পাওয়ায় পুরো ভ্রমণের আনন্দই মাটি। রুম না পেয়ে ফুটপাতে বসে থাকা মোসারফ হোসেন বলেন, ছুটি পেয়ে আমরা বন্ধুরা গ্রুপ করে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। কিন্তু রাতে ওই আনন্দ মাটি করে দিলো হোটেল রুম। রুম না পেয়ে ১৭ বন্ধুসহ এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।

অপদিকে রাত্রিকালীন সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে হাজারো পর্যটক এখন সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে দ্বীপের শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং কটেজ পর্যটকে ভরে গেছে।
হোটেল মালিকরা জানান, লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ছুটির সুযোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ফাঁকে আগে থেকেই ৯০ ভাগ পর্যটক সেন্টমার্টিনের হোটেল এবং কটেজে বুকিং দিয়েছেন।

এমনকি হোটেল-কটেজ পরিপূর্ণ হলে হাজারো পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটিয়েছন বলে জানা গেছে। অনেকেই আবার সেন্টমার্টিনে রুম না পেয়ে ঘর ভাড়া করে নিয়েছেন বলে জানা যায়।

ঢাকা মিরপুর থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক নাফিস ইকবাল বলেন, 'সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসে রাতযাপন করার শখ ছিল দীর্ঘ দিনের। আনন্দ উদযাপন করতে পরিবার নিয়ে প্রবাল দ্বীপে ছুটে এসেছি।'

সেন্টমার্টিন হোটেল কটেজ মালিক সমিতি ও দ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান জানান, তিন দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকে ভরে গেছে সেন্ট মার্টিন। পর্যটকরা প্রতি বছর এ সময়ে সেন্টমার্টিনে আসেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দ্বীপের হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি সব সময়ই পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, তিন দিনের ছুটিতে ৭/৮ হাজারেরও বেশি পর্যটক দ্বীপে এসেছেন। অনেক পর্যটক হোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে ইতিমধ্যে তাঁবু, প্যান্ডেল ভাড়া নিয়েছেন। তারা নিকটজনদের নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটিয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে থেকে প্যান্ডেল অবস্থান নিয়েছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কি.মি সমুদ্র সৈকতজুড়ে নানা বর্ণের ও বয়সের হাজার হাজার পর্যটক দেখা যায়। কেউ উত্তাল ঢেউয়ের সাথে জলকেলিতে মাতছেন, কেউবা সমুদ্রবাইকে চড়ছেন, কেউ কেউ চেয়ারে বা সৈকতের বালিতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আর কেউবা সৈকতের প্রাকৃতিক পথ ধরে মাইলের পর মাইল হেঁটে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এসব পর্যটকের ভিড়ে শুক্রবার বিকালে কলাতলী সৈকতে কথা হয় পর্যটক আজিজুল হক ও রফিক আহমদ দম্পতির সাথে। টানা সরকারি ছুটিতে শুক্রবার সকালে তারা কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। থাকবেন সোমবার পর্যন্ত। করোনা সংক্রমণের ভয়ে দীর্ঘ দিন আটপৌড় জীবন কাটিয়ে একটু বুকভরে সতেজ নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য তিন দিনের ছুটি নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন। একই দিন বেড়াতে আসা হবিগঞ্জ থেকে আসা রাজিয়া ও কবির কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কথা হয়। জীবনে প্রথম এসেছেন তারা। তারা এই বারিয়ালী সৈকত প্রথম দেখে বিমোহিত বলে জানান। তাই জীবনে এমন সময় কখনো ভুলব না।

কক্সবাজার ট্যুরিজম ব্যবসায়ী আরাকান হোসেন জানান, পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সৈকত, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরছেন। যাচ্ছেন সেন্টমার্টিনে। আগামী রোববার পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে আছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক লোকজন এসেছে। আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে চেষ্টা চালাচ্ছি। যেকোনো ধরনের হয়রানি রোধে জেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত হোটেল-মোটেল জোনে টহলে রয়েছে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা পালন হচ্ছে কিনা তদারকি চলছে নিয়মিত। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র (ইনবক্স)।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার রোধে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং ছদ্মবেশে নারী-পুরুষ পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement