০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফরিদপুরে চালককে হত্যা করে ভ্যান বিক্রি : গ্রেফতার ৩

-

ফরিদপুরে মেহগনি বাগানে নিয়ে এক ভ্যান চালককে খুন করে ভ্যান ছিনতাই করে তিন কিশোর ও তরুণ। পরে ছিনতাই করা ভ্যান মাত্র এক হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম এ তথ্য জানান।
নিহত হারুন অর রশিদ নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দুলারডাঙ্গী গ্রামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে স্ত্রী রহিমন বেগম ও আট বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলত তার সংসার।
পুলিশ সুপার জানান, গত বুধবার রাতের বিভিন্ন সময়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া ওই তিনজন হলো, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার আনসার মণ্ডলের ছেলে লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল (২৩), একই উপজেলার চর হোসেনপুর এলাকার আমিন মণ্ডলের ছেলে রুমান মণ্ডল (১৭) ও নতুনডাঙ্গী এলাকার হালিম শেখের ছেলে সাহিদুল শেখ (১৭)।
নিহতের পরিবার ও আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হারুন অর রশিদ। ওই দিন রাত ৮টার সময় কোতোয়ালি থানার গজারিয়া বাজারের স্ট্যান্ড থেকে সাইনবোর্ড নামক এলাকায় যাওয়ার জন্য দেড় শ’ টাকায় হারুনকে ভাড়া করে রুবেল ও রুমান। এরপর পথে কলাইহাট এলাকা থেকে সাহিদুলকে ভ্যানে তুলে নেয়। যার মূল পরিকল্পনায় ছিল রুবেল।
এরপর সাইনবোর্ড এলাকার পদ্মা নদীসংলগ্ন একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ভ্যানচালক হারুনকে ধারালো চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে তারা। তখন হারুন ভ্যানের জন্য অনুনয়-বিনয় করে। তখন আসামিরা বলে, ‘বেঁচে থাকলে ভ্যান কিনতে পারবেন, এখান থেকে চলে যান।’ আবারো সে ভ্যানের মায়ায় আসামিদের অনুনয়-বিনয় করার সময় আসামি রুবেলের হাতে থাকা চাকু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা তার মাথায় বারবার আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা ভ্যান নিয়ে চলে যায়। এরপরের দিন ওই এলাকা থেকে অজ্ঞানামা হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের স্ত্রী লাশ শনাক্ত করেন।
এ ঘটনার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইসহ হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী রহিমন বেগম। এ মামলায় তদন্ত করেন থানার এসআই মো: মিজানুর রহমান।
দুই মাসের মধ্যে এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। তবে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হবে এবং ভ্যানটি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উঠতি বয়সেই পেশাদার ছিনতাইকারী রুবেল : ভ্যানচালক হারুন অর রশিদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার এমন অপরাধকর্মের পেছনে রয়েছে বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা। এমনই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
চরভদ্রাসন উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা আনসার মণ্ডলের সাথে তার মা ফরিদা বেগমের প্রথম বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরেই জন্ম তার। এরপর তার মা একই এলাকার মান্নান নামে অপর এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। পরে ওই সৎ পিতার বাড়িতে বড় হতে শুরু করে রুবেল। এরপর আবারো তার মা একই এলাকার করিম ঢালী নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। এভাবেই বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠে সে। একপর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সুপার জানান, আসামি রুবেল এর আগে ঢাকার সাভার এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাই করে। এ সময় ওই রিকশা চালককে নির্মমভাবে মারধর করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে রিকশা নিয়ে চলে যায়; কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওই রিকশা চালক বেঁচে যান। এ ঘটনায় সাভার থানায় একটি ছিনতাই মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গত জানুয়ারিতে ওই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসে সে। এরপর আবারো ছিনতাই অপরাধে জড়িয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: সালাউদ্দিন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাসানুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement