২২ মে ২০২৪, ০৮ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দায় নেই পানিপ্রবাহ

অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে খালগুলো
প্রবাহ না থাকায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে নরসুন্দা নদ : নয়া দিগন্ত -

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদ দু’টির তলদেশে পানির প্রবাহ না থাকায় সেচনির্ভর কৃষকরা বোরো মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে খেতে সেচ দিতে পারে না। তাই এক কালের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ স্মৃতির গহিনে হারিয়ে যাচ্ছে। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের বেশির ভাগ অংশ খনন করলেও বর্তমানে পানি প্রবাহ না থাকায় অস্তিত্ব ও নাব্যতা সঙ্কটে এখন স্রোতহীন মরা খালে পরিণত হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ দু’টি পুনঃখনন করে পানির প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নদীর দু-পারের মানুষ। আর তাতেই সুফল পাবে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতুসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। হোসেনপুর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ও জমালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ না থাকায় এর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীনের পথে। নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজ প্রাণি। নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলো বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়ার মাঝিরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বাপ-দাদার চিরাচরিত আদি পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলোও এখন বিত্তবানদের ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখলে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই মারামারিতে প্রাণহানি ঘটে থাকে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের খাস জমি ও বালু ব্যাবসার আধিপত্যের জেরে সামাজিক অসন্তোষ বেড়েইে চলছে।
অপর দিকে হোসেনপুরের চর জামাইল থেকে চর-পুমদি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিগত দিনে নরসুন্দা নদ যথাযথ খনন না করা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ রক্ষা না করায় নরসুন্দা নদ কচুরিপানায় ভরা।
রামপুর বাজারসংলগ্ন নরসুন্দা পাড়ের ব্যবসায়ী সঞ্জীত চন্দ্র শীলসহ অনেকেই জানান, এক সময় এ নরসুন্দা নদ দিয়ে আশুগঞ্জ, ভৈরব ও সুনামগঞ্জ থেকে বড় বড় নৌকা ও কার্গো মালামাল নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ও বরমী বাজার পর্যন্ত চলাচল করত।
অপর দিকে ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন খুরশিদ মহল গ্রামের ওয়াদুদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, নাব্যতা সঙ্কটে দু’ধারের কৃষি জমিগুলোতে প্রতি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পেরে কৃষকেরা চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তা ছাড়া নদীভাঙনরোধে কোনো কার্যকরী ও টেকসই ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম,বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করলেও অদ্যাবধি নেয়া হয়নি কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। নাব্যতা সঙ্কটে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, তৎকালীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ওই ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েই নৌবহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌবহরও নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করতেন। হোসেনপুরে তারা নীলকুঠিও স্থাপনও করেছিলেন। এসব সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ কেবল স্মৃতি, নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ বিপন্ন।


আরো সংবাদ



premium cement