০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেশসেরা চৌগাছা মডেল হাসপাতাল জনবল সঙ্কটে

-

চিকিৎসাসেবায় ১৬ বার দেশসেরা পুরস্কার পাওয়া যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালটি এখন জনবল সঙ্কটে ভুগছে। বর্তমানে অর্ধেক জনবল দিয়ে চলা এই হাসপাতালটি সেই আগের মতো রোগীদেরকে মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার রোগীরা।
জানা যায়, চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩২টি। এখন খাতা-কলমে কর্মরত আছেন ১৫ জন চিকিৎসক। যদিও তাদের মধ্যে ছয়জনই থাকেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কেউ কেউ দেশের বাইরেও রয়েছেন বলে জানা যায়।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, হাসপাতালে এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি অ্যানেসথেসিয়া, অর্থো ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ২১ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি, সার্জারি, মেডিসিন, শিশু, অর্থো, কার্ডিও, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং নবসৃষ্ট সহকারী সার্জন, আইএমও, প্যাথলজিস্ট, অ্যানেসথেসিস্ট এমনকি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার নেই। ভারপ্রাপ্ত হয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন ডা: ইমরান। এ ছাড়া দুইজন সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান সহকারী, প্রধান সহকারী-কাম হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, হিসাব রক্ষকসহ ৭১টি পদের মধ্যে ৩৭টি পদই শূন্য। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।
বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় মা ও প্রসূতিসেবায় অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই হাসপাতালটি উপজেলাপর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৬ সালেও হাসপাতালটি অর্জন করে জাতীয় পুরস্কার। স্বাস্থ্যসেবায় সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পেয়েছে হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেলিনা বেগম।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, শত শত রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাত্র চারজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। ৩ নম্বর রুমে ডা: আল ইমরান রোগী দেখছেন। এ রুমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মা, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের শত শত রোগী। ১২ নম্বর রুমে রোগী দেখছেন ডা: সুরাইয়া। এ রুমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন গাইনি সমস্যা নিয়ে শত শত নারী। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা ডেলিভারি ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ সময় সেবা নিতে আসা উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের মফিজুর রহমান, হাকিমপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান, দুলালপুর গ্রামের আবুল বাশারসহ অনেকেই জানান, প্রচণ্ড গরমে রোগীদের ভিড়ের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আবার বেলা ১টার পর অনেক ডাক্তারকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হয় যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: লুৎফুন্নাহার বলেন, অর্ধেক লোকবল নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। মোট লোকবল ২১০ জন। খাতা-কলমে আছেন ১৩৩ জন। ৭৭টি পদই শূন্য রয়েছে। তিনি বলেন, এই লোকবল নিয়ে কোয়ালিটি সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা: বিপ্লব কান্তি বলেন, দেশে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন করে ডাক্তার ভাগে পড়ে। চৌগাছায় তার ব্যতিক্রম। অনেকে হঠাৎ করে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। তাই শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ শূন্যতা পূরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement