২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুপেয় পানির অভাবে কাউখালীতে দুর্ভোগ

দীর্ঘ পথ পেড়িয়ে খাবার পানি আনছেন চরের বাসিন্দারা : নয়া দিগন্ত -

চরের নাম কাউখালী। চরের চারপাশে পানি আর পানি। কিন্তু সুপেয় খাবার পানির বড্ড অভাব। কাছাকাছি নলকূপও (টিউবওয়েল) নেই। তাই নৌপথে দূর-দূরান্ত থেকে পানি আসে চরে। তবে সবসময় সে পথে পানি আনাও সম্ভব নয়। তখন বাধ্য হয়ে নদী কিংবা খালের পানিই ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হয়।
কাউখালী চরের ভৌগোলিক অবস্থান পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে। আগুনমুখা নদী ঘেঁষেই চরটি জেগে উঠেছে। কিন্তু নদীর সাথে মিশে থাকা বিস্তীর্ণ জলাশয়ের এ পানি লবণাক্ত। এ ছাড়া জলাশয়ের পাশে রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য খোলা টয়লেট। তাই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট ১২ মাস।
ওই চরের গৃহিণী রাবেয়া বলেন, ‘ধারে কাছে কল নাই। আমরা খাবার পানির জন্য অনেক কষ্ট করি। বেশির ভাগ সময় খালের পানি দিয়ে রান্না করি।’
কাউখালী চরে জনবসতি আছে প্রায় ১০০ কিন্তু হাতেগোনা নলকূপ আছে মাত্র দুই-তিনটি। নদী ও খাল তীরবর্তী অর্ধশত বাড়ি থেকে সেই নলকূপের দূরত্ব প্রায় তিন-চার কিলোমিটার। ছোট ছোট খাল-নালা ও আঁকা-বাঁকা পথ পেড়িয়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করাও অনেক কষ্টসাধ্য। সুপেয় পানি নিয়ে তাদের এমন হাহাকার যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।
চরের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এ জায়গায় কোনো কল (গভীর নলকূপ) নাই। টাকা দিয়া ট্রলারে পানি আনি। যখন পানি পাই না, তখন খালের পানিতে ফিটকিরি দিয়া খাই। বর্ষাকালে দরিয়ায় (নদী) তুফান (ঢেউ) থাহে। আবহাওয়া খারাপ হলে ট্রলার যাইতে পারে না।’
জানা গেছে, ১০-১৫ বছর আগে কাউখালী চরে বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানকার মানুষজন কৃষি, মৎস্য ও পশু পালনের পেশায় নিয়োজিত। চরের বাসিন্দারা জানান, আগুনমুখা নদী পেড়িয়ে পাশর্^বর্তী গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি কিংবা চরফ্যাশন উপজেলার নদী-তীরবর্তী এলাকা থেকে ট্রলারযোগে গভীর নলকূপের সুপেয় পানি আনতে হয় এ চরে। ট্রলারের তেল পুড়ে পানি আনতে খরচও হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
কাউখালী চর ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং নদী-তীরবর্তী হওয়ায় চরটির পুকুরগুলোতেও লবণাক্ততা ছড়িয়ে গেছে। তাই ড্রামে পানি সংগ্রহ করে ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে চলে রান্নাবান্না এবং গৃহস্থালি কাজ। বাসিন্দারা বলছেন, এর ফলে পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে চরে। চরের বাসিন্দাদের দাবি, সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করলে তাদের পানির কষ্ট লাঘব হবে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের প্রকৌশলী সাথী বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিবো।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিগগিরই কাউখালী চরের বাসিন্দাদের জন্য আমরা সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবো। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা নেবো।’


আরো সংবাদ



premium cement