২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাবনায় লিচুর ফলন বিপর্যয় বাগান মালিকরা হতাশ

সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে লিচু বিক্রি
পাবনার আওতাপাড়া হাটে লিচু বিক্রিতে ব্যস্ততা। ইনসেটে সেরা মানের লিচু : নয়া দিগন্ত -

পাবনার ঈশ্বরদীকে লিচুর রাজধানী বলা হয়। এই এলাকার লিচু অনেক উন্নতমানের এবং এই লিচু দেশের বাইরেও রফতানি হয়। ঈশ্বরদীর অনেক লিচু বাগানের মালিকদের সারা বছরের সংসার খরচ চলে এই লিচু বিক্রির টাকা দিয়ে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন অর্ধেকে নেমে আসায় বাগান মালিকদের মনে কিছুটা হতাশা নেমে এসেছে। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, লিচুর দাম এবার ভালো। তাই, ফলন বিপর্যয় হলেও লিচু চাষিরা পুশিয়ে নিতে পারবেন। তারা জানান, ঈশ্বরদী থেকে এবার ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিকে সরবরাহ কম থাকায় খুচরা বাজারে লিচুর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে সাধারণ মানুষ এ কারণে কিছুটা হতাশ।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় রসালো পাকা লিচু ঝুলে আছে। গাছ থেকে অনেকে লিচু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই সপ্তাহেই সব লিচু সংগ্রহ হয়ে যাবে। ঈশ্বরদীতে শুধু বাগানেই নয়, প্রতিটি হাটের অবস্থাও একই। চোখ যে দিকে যায় সে দিকেই শুধু লিচুর ঝুড়ি। বাগান মালিকদের অনেককেই ভ্যান ভর্তি করে লিচু নিয়ে বাজারে আসতে দেখা যায়। লিচুর বাগান ও হাটে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম। প্রচ গরম উপেক্ষা করে লিচু ক্রয়-বিক্রয় চলছে হরদম। দেশের সব জায়গাতেই পাবনার লিচুর কদর রয়েছে।
প্রথম দিকে শুধু ঈশ্বরদীতে লিচুর চাষ হলেও এটি এখন সারা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আটঘরিয়া, পাবনা সদর, চাটমোহর, ফরিদপুর উপজেলায়ও ব্যাপক হারে লিচুর আবাদ হচ্ছে। লিচুর চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এই ফলটির আবাদও বেড়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি জেলায় লিচু চাষ হলেও ভৌগোলিক কারণে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলার লিচুর বাজারজাত শুরু হয় একটু আগেই। মে মাসের শেষের দিকে শুরু হয়েছে লিচুর বাজারজাতকরণ। প্রথম দিকে মোজাফফর জাতের লিচু দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়। এখন বোম্বাই জাতের লিচুর বেচাকেনা চলছে।
পাবনা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ মেট্রিক টনের বেশি লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এ জেলায়। এর মধ্যে লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলাতেই তিন হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। পুরো জেলায় ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, এবার ফলন বিপর্যয় না হলে হাজার কোটি টাকার লিচু বিক্রি হতো।
এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটে বলে অনেকে বলছেন। এ বিপর্যয়ের কারণেই ফলন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। এবার গাছে প্রচুর মুকুল এলেও তখন অতিবৃষ্টিতে মুকুল ঝরে যায়। আবার যখন লিচু বৃদ্ধি ও পরিপুষ্ট হওয়ার সময়কাল ছিল, তখন অনাবৃষ্টির কারণে লিচু আকারে ছোট হয়ে যায়। গত বছর যে গাছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার লিচু হয়েছিল, এ বছর সেই গাছে লিচু এসেছে মাত্র ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার। লিচুর এই ফলন বিপর্যয়ে এবার লিচুর দামটা একটু বেশি। এ কারণে লিচু চাষিরা কিছুটা পুশিয়ে নিতে পারবেন।
লিচুর হাটগুলোতে এখন লিচু বেচাকেনায় জমজমাট। প্রথম দিকে মোজাফফর জাতের লিচুর দাম কিছুটা কম ছিল। চলতি সপ্তাহে সেই মোজাফফর জাতের লিচুও প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২২০০-২৫০০ টাকায়। এ সপ্তাহের শুরুতে লিচুর আরেক জাতের (বোম্বাই লিচু) কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এই প্রজাতির লিচুর দাম আরো বেশি। প্রতি হাজার বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়। তবে খুচরা বাজারে আরো বেশি দামে এই লিচু বিক্রি হয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি ১০০ বোম্বাই লিচু ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে সাধারণ ক্রেতারা হতাশ। তারা বলেন, এতো দামে লিচু কিনে খাওয়ার সামর্থ্য অনেকেরই নেই।
ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার লিচু চাষিরা জানান, এবার লিচুর ফলন কম কিন্তু দাম বেশি। এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হবেন। তবে হাটের তুলনায় বাগানেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু। সদর উপজেলার মাধপুরের লিচু চাষি আব্দুল গাফুর জানান, যখন লিচুতে মুকুল এসেছিল, তখনই পাবনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল। সে সময় অতি তাপমাত্রার কারণে গাছের মুকুল ও গুটিলিচু ঝরে গেছে। এ ছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তখন তীব্র গরমে অনেক কচি লিচু গাছেই ফেটে গেছে অথবা পচে গেছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, স্বাভাবিকভাবেই যে গাছে ৯০-৯৫ শতাংশ লিচু ধরে, পরের বছরে সেই গাছে ৬০-৬৫ শতাংশ মুকুল আসে। গত বছর ফলন বেশি হয়েছে। ফলে এ বছর ফলন কিছুটা কম হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে ফলন কম হলেও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার, ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈরী আবহওয়ার কারণে গাছে স্প্রে করারও পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং কৃষকরা সেটা করেছেও।


আরো সংবাদ



premium cement