০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনার পর প্রাণ ফিরে পাচ্ছে পাবনার তাঁতশিল্প

জমে উঠেছে শাহজাদপুর তাঁত কাপড়ের হাট : নয়া দিগন্ত -

চৈত্র মাস থেকে পাবনা অঞ্চলের (পাবনা-সিরাজগঞ্জ) তাঁত মালিক ও শ্রমিকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। পয়লা বৈশাখ, ঈদুল ফিতরের পর এখন ঈদুল আজহার বাজার ধরার জন্য তারা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তৈরি করছেন আন্তর্জাতিক মানের মনোমুগ্ধকর নানা নকশার কাপড়। আর এ কাপড় বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ দিকে করোনার দুই বছরে তাঁতিরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছিলেন। এখন তারা ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প ফিরে পাচ্ছে প্রাণ।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁত প্রধান গ্রামগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারখানা মালিক ও শ্রমিকরা কাপড় তৈরিতে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সাথে হাত মিলিয়ে নলীভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়াসহ শাড়ির ওপরে বর্ণিল সুতা, বাক ও চুমকির পাশাপাশি প্রিন্ট ও রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন নানা নকশা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উত্তরাঞ্চলের প্রধান কাপড়ের হাট। সপ্তাহের শনিবার, রোববার, মঙ্গলবার ও বুধবার চার দিন হাট বসে। এই হাটে পশ্চিমবাংলা থেকে আসা বেশ কয়েকজন কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলী, বর্ধমান, নদীয়া, মুরশিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কুচবিহার, হওড়া ও হুগলীসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামী শপিংমল ও বিপণি বিতাণগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি শোভা পাচ্ছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশী শাড়ির বাজার জমে উঠেছে।
বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার তাঁত কারখানার তৈরি সিল্ক জামদানি, সুতি জামদানি, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশি, স্বর্ণলতা শাড়ির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আর নান্দনিক নকশার টেকসই এসব শাড়ির দাম কম হওযায় পশ্চিমবাংলার মহিলাদের বেশি পছন্দ বাংলাদেশী শাড়ি। শাড়ির পাশাপাশি বাংলাদেশী থান কাপড়ের পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। একথান কাপড় দিয়ে তারা পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজ তৈরি করছেন। জামদানি থ্রি-পিস দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা এবং চেক থ্রি-পিস ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দামে কিনছেন। পরে সেই কাপড় সড়ক পথে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলার বিপণিবিতাণগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ অঞ্চলের তাঁতপল্লীতে উন্নতমানের জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, সুতি জামদানি, বেনারশি ও শেট শাড়ির পাশাপাশি মোটা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ও থানকাপড় তৈরি হচ্ছে। এসব শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ভারতেও রফতানি হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের বাজারে সোনার বাংলা টেক্সটাইল, ডিসেন্ট, ইউনিক, স্টান্ডার্ড, আমানত শাহ, রুহিতপুরী, স্মার্ট, অমর, পাকিজা, এটিএম, বোখারি, ফজর আলী, অনুসন্ধান, জেএম, স্কাই, চাচকিয়া, ওয়েস্ট, রংধনুসহ ১৩৫ ব্রান্ডের লুঙ্গি চাহিদা বেড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের লুঙ্গি তৈরি করছে। মান ভেদে প্রতি পিস লুঙ্গি ২৮০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।


শাহজাদপুরের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী আল-হেলাল জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শাহজাদপুর ও আতাইকুলা হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৫ কোটির কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে এ অঞ্চলের তাঁতশিল্প প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। দামও গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
কলকাতার কাপড় ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সেন জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের কাপড় কলকাতা, গঙ্গারামপুর ও পাটনাসহ বড় বড় শহরে বিক্রি হচ্ছে। সে দেশের চেয়ে এ দেশের কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম, টেকসই ও উন্ন মানের হওয়ায় তারা এখান থেকে কাপড় কিনছেন। তিনি জানান, ভারতের রফতানিকারকদের কাছে বাংলাদেশের লুঙ্গির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
এ ছাড়া বিবিআনা, রঙ, কে-ক্রাফট ও নগরদোলাসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় বুটিক প্রতিষ্ঠানের কাপড়ও এখন সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে। বুটিক হাউজগুলোর নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রত করে কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। বুটিক হাউজের ওড়না থান কাপড় ও এন্ডি থান কাপড়ের ফ্রেবিক্স তৈরি করা হচ্ছে তাঁত পল্লীগুলোতে। এ দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরী করছে বুটিক হাউজগুলো।
এবার স্বর্ণলতা নামে নতুন এক শাড়ি বাজারে এনেছেন শাহজাদপুরের তাঁতিরা। হাফ সিল্কের ওপর ঝুটের মনমুগ্ধকর নকশা করা কাপড় খুললেই স্বর্ণের মতো ঝলমল করে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে স্বর্ণলতা। ইতোমধ্যেই এ শাড়ি ক্রেতাদের মন কেড়েছে। বাজারে এর দাম দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। স্বর্ণলতা কাপড় প্রস্তুতকারক দরগাপাড়া গ্রামের তাঁতি আজমল কবীর বলেন, রুচিশীল ক্রেতাদের বিষয়টি খেয়াল রেখেই ভারত থেকে জুট এনে ওই জুট দিয়ে হাতে বিভিন্ন নকশা করে স্বর্ণলতা শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এ শাড়ির প্রকৃত নাম সাউথ কাতান। বাজারে এ শাড়ির চাহিদা আকাশ ছোঁয়া।
পাইকারি বিক্রেতা জালাল উদ্দিন জানান, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শাহজাদপুর হাটে পাইকাররা আসছেন। চৈত্র মাস থেকে কাপড়ের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তাঁতিদের পিছে পিছে ঘুরে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় মিলছে না। ব্যবসায়ীরা অগ্রীম টাকা দিয়ে তাঁতিদের বাড়ি থেকে কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক তাঁতিই তার কারখানার কাপড় আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। যদি কাপড় পাওয়া যায়- তবে তার দাম অনেক বেশি।
সুতা ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ জানান, তুলার সঙ্কট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম বৃদ্ধির কারণেই স্থানীয় বাজারে সুতার দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে তুলা সঙ্কটে বাজারে সুতার দাম বেড়েছে। তাঁত মালিক সমিতির নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সুতার দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের মজুরিসহ তাঁতের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে কাপড় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে তাঁতিদের বেশি দামে কাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর আপ লাইন চালু ফের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এলো মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি রোববার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন শিব্বির আহমদ রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শিডিউল বিপর্যয়, ভোগান্তি যাত্রীদের গণহত্যা বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে : ছাত্রশিবির দোয়ারাবাজারে মইন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ উপজেলা নির্বাচন : দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ঝালকাঠিতে পারিবারিক দ্বন্দ্বে হত্যা, বাবা ও ভাই গ্রেফতার বন্যাবিধ্বস্ত কেনিয়া ও তানজানিয়ায় ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা জারি

সকল