৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পানিশূন্য তিস্তায় সবুজ ফসল

রাজারহাটে তিস্তার চরে সবুজ ফসলের ক্ষেত : নয়া দিগন্ত -

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে, পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি।’ বিশ্বকবির কালজয়ী কবিতা এখন বাস্তবে রূপ ধারণ করেছে প্রমত্তা তিস্তার ক্ষেত্রে। প্রমত্তা তিস্তা নাব্যতা হারিয়ে এখন মৃত নদী। পানিবিহীন নদীর বুকে ধু ধু বালুচর। কোথা কোথাও সবুজ ফসলের ক্ষেত। চাষাবাদ হচ্ছে ইরি-বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, তিসিসহ রকমারি ফসল। কোথাও কোথাও উঠেছে ঘড়বাড়ি ও দোকানপাট।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর শত শত হেক্টর জমিতে বালুর স্তর পড়েছে। নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌরুট। নাব্যতা হারিয়ে তিস্তা নদী শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানিশূন্য হয়ে পড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে নুড়ি পাথর, কাকনযুক্ত বালু ও মাটি বয়ে আসায় দ্রুত নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত বালু ও কাঁকরযুক্ত মাটির স্তর পড়ে নদীর বুকের ফসল আবাদকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তোলার কাজ চলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। আর পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে তিস্তা নদী। নানা প্রয়োজনে নদীপথে এক স্থান থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের সেই সুব্যবস্থা আর নেই। মানুষকে এখন নদীর বুক জুড়ে জেগে ওঠা চরে মাইলকে মাইল পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও মাঝ নদীতে পানি থাকলেও নাব্যতা সঙ্কটের কারণে নৌচলাচল বন্ধ হয়েছে। অনেক স্থানে হেঁটেও হাঁটু পানি ভেঙে নদী পার হতে হচ্ছে।
প্রতি বছর তিস্তা নদীতে নতুন নতুন স্থানে চর পড়ে বালুর স্তর পুরু হয়ে যাওয়ায় অনেক পলিময় উর্বর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারেন না কৃষকরা। বিস্তীর্ণ জমির আবাদ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। নানা কারণে প্রতি বছর আবাদি জমি আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে। তবুও থেমে নেই কৃষকরা।
উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট গ্রামের সিরাজুল জানান, এক সময় এই চরগুলোতে কোনো চাষাবাদ হতো না। এখন আলু, বাদাম, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, কাউনসহ রকমারি আবাদ হচ্ছে। চরবিদ্যানন্দ গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস ছালাম বলেন, আলু ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের পর এখন আমরা বাদাম, রসুন, মিষ্টি কুমড়া ও কাউন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শম্পা বেগম জানান, রাজারহাট উপজেলায় চরের মোট ১৬৯০ হেক্টর জমির মধ্যে ১৩৫০ হেক্টর জমি চাষাবাসের আওতায় এসেছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রণোদনা পুনর্বাসন ও কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চরে আলুর বাম্পার ফলনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।


আরো সংবাদ



premium cement