৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হাইড্রোলিক জরিপ ছাড়া বালুমহাল ইজারা : ক্ষতিতে ব্যবসায়ীরা

-

রাজশাহীতে হাইড্রোলিক জরিপ ছাড়াই ইজারা দেয়া হয়েছে বালুমহাল। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এতে ইজারা নেয়া ব্যবসায়ীরা। এদিকে এভাবে ইজারা দেয়ায় আইনও লঙ্ঘন হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী বালুমহাল ইজারা দেয়ার আগে নির্ধারিত এলাকার হাইড্রোলিক জরিপ করতে হবে। এর মাধ্যমে বালুর মজুদ নির্ধারণ করে ইজারামূল্য ঠিক করা হবে। বালুমহাল নীতিমালা আইনে এমনটাই উল্লেখ আছে। কিন্তু রাজশাহীর চরশ্যামপুর ও দিয়াড়খিদিরপুর বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে জরিপ ছাড়াই।
বাংলা ১৪২৭ বর্ষের ১০ মাসের জন্য এই বালুমহালটি ইজারা নিয়েছে মেসার্স রজব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এবার ইজারামূল্য পরিশোধ করেছে ছয় কোটি ২৪ লাখ টাকা। অথচ ১৪২৩ থেকে ১৪২৫ বঙ্গাব্দে বালুমহালটি ইজারা দেয়া হয়েছিল নামমাত্র মূল্যে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দেও মাত্র দুই কোটি ২০ লাখ টাকায় বালুমহালটি ইজারা দেয়া হয়েছিল। এবার হাইড্রোলিক জরিপ ছাড়াই বিপুল টাকায় বালুমহালটি ইজারা নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে রজব অ্যান্ড ব্রাদার্স। এই প্রতিষ্ঠানটির নামে বালুমহালটি ইজারা নেয়া হলেও এর সাথে আরো কিছু ব্যবসায়ী যুক্ত রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ক্ষতি কাটাতে রজব অ্যান্ড ব্রাদার্সের পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন দিয়ে বালুমহালটি আরো ছয় মাস তাদের কাছে রাখার দাবি জানানো হয়েছে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী এক চিঠিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে একটি মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহীর বালু সিন্ডিকেট চার বছর ধরে বালুমহালগুলো জিম্মি করে রেখেছিল। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ইজারা দেয়ার সময় স্বচ্ছতা থাকলে তারা উন্মুক্ত দরপত্রে ছয় কোটি ২০ লাখ টাকায় চরশ্যামপুর ও দিয়াড়খিদিরপুর বালুমহাল ইজারা নেয়। হাইড্রোলিক জরিপ করে বালুমহালের বালুর মজুদ নির্ধারণ করা না হলেও প্রতিযোগিতায় বিপুল টাকায় বালুমহালটি ইজারা নেয়া হয়। কাঁচা রাস্তা ও বাঁধের কারণে বালু উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে একটা লম্বা সময় বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বালুমহালের মৌজার সীমানা নির্ধারণ করা না থাকায় স্থানীয় এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণেও বালু উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ইজারামূল্যের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
আবেদনে আরো বলা হয়, এর আগের চার বছরে বালুমহালটির জন্য সরকার যে রাজস্ব পেয়েছে এবার ১০ মাসের জন্যই তার তিনগুণ অর্থ দিয়েছে মেসার্স রজব অ্যান্ড ব্রাদার্স। কিন্তু যে ধারণা করে বালুমহালটি ইজারা নেয়া হয়েছিল সেই পরিমাণ বালু সেখানে পাওয়া যায়নি।
তাই এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যারা বালুমহালে বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আবার বালুমহালটি নতুন বছরের জন্য ইজারার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এটি অন্য কাউকে ইজারা দেয়া হলে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা গ্রহণকারীরা পথে বসবেন। সে কারণে ক্ষতি কাটাতে আগামী ছয় মাস বালুমহালটি তাদের কাছেই রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ইজারাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি মতামতসহ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। দ্রুতই সেটি পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement