২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধ স’মিলের ছড়াছড়ি

-

বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাত কলের ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে। সুন্দরবন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এই করাত কলগুলো বসানোর কারণে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ এক যৌথ অভিযান চালিয়ে পাঁচটি করাত কল বন্ধ করে দেয়। পরে বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের পক্ষ থেকে করাতকল আইনে ওই পাঁচ কল মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দেয়ার পর মিলগুলো কিছুদিন বন্ধ থাকলেও কয়েক দিন পর করাত কলের মালিকরা বনবিভাগের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে পুনরায় কাঠ চেরাই শুরু করেন।
সম্প্রতি অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক আকনের ছেলে সোহাগ আকন বাগেরহাট জেলা প্রসাশক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। জনবসতিপূর্ণ এলাকাসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এ সব অবৈধ করাত কল রাতারাতি স্থাপন করা হলেও প্রসাশন ও বন-বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপনের বিধান না থাকলেও তা মানছেন না বনসংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালীরা। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগ ও প্রসাশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে রাতারাতি স্থাপিত হচ্ছে এসব স’মিল। এ ছাড়া বনসংলগ্ন এলাকার করাত কলগুলোর কারণে গত ২০ বছরে সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া, বাইনসহ মূল্যবান সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি সামাজিক বনায়নের নানা প্রজাতির বহু গাছ ইতোমধ্যে উজাড় হয়েছে। অথচ বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা প্রসাশনের একটি কমিটি থাকলেও তার কোনো কার্যক্রম নেই।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, স’মিল মালিকরা বন বিভাগ, প্রসাশন ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই রাতারাতি স’মিল বসিয়ে সুন্দরীসহ নানা প্রজাতির কাঠ চেরাই শুরু করেন। তবে মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তারা বনের বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান কাঠ চেরাই করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে পাচার করছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই মিলগুলো বসিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তারা বিভিন্ন প্রকার কাঠ চেরাই করে আসছে। মামলা হওয়া সত্ত্বেও তারা থেমে নেই। এমনকি সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০০ ফুট পূর্ব দিকে দু’টি স’মিল ছাড়াও উপজেলার কাসেমুল উলুম কওমি মাদরাসাসংলগ্ন নলবুনিয়া, সিংবাড়ী, তাফালবাড়ী কলেজসংলগ্ন সেলিম হাওলাদার, দক্ষিণ মালিয়া রাজাপুর স্কুলসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ছগির আকনসহ গত এক বছরে উপজেলার অনেক বাসিন্দা অবৈধভাবে একাধিক করাত কল স্থাপন করেছে। রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি গাছ ফেলে রাস্তা নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সুন্দরবনসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধক্ষ্য ফরিদ খান মিন্টু বলেন, নিয়মনীতির বাইরে কিভাবে করাত কলগুলো স্থাপিত হলো তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রভাবশালী চক্রের লাগাম টানতে বন বিভাগ ও প্রসাশনের আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
অপর দিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে করাত কল মালিক উপজেলার তাফালবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী আলাউল আহসান সেলিম বলেন, আইনকে অবজ্ঞা করা কিংম্বা অবৈধভাবে করাত কল স্থাপনের বিষয়টি সঠিক নয়। তবে আমাদের কোনো কাগজপত্র না থাকলেও লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছি।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসএিফ) জয়নাল আবেদীন জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল বা কোনো প্রকার মিল বা কলকারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কিছু করাত কল বসিয়েছে। সম্প্রতি পাঁচটি করাত কলে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়ার পরও আইন অমান্য করে মিলগুলো চালু করেছে মালিকরা। তাদের বিরুদ্ধে পুনরায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, মিলগুলো বন্ধ করে মামলা দেয়ার পরও ফের চালু করায় তারা আইনকে অবজ্ঞা করেছে। তবে নতুন ও পুরনো সব স’মিল মালিকদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement