হাতিয়ায় জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিরা দুর্ভোগে
- ইফতেখার হোসেন তুহিন হাতিয়া (নোয়াখালী)
- ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:৪৫
সম্প্রতি হাতিয়া উপজেলার সুখচর, নলচিরা, চরকিং, চরঈশ্বরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পান বরজের সংখ্যাই ছয় শতাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পানের বরজের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা হতে পারে বলে দাবি পানচাষিদের।
হাতিয়ায় পানচাষের এলাকা হিসেবে খ্যাত চরকিং ইউনিয়নের দাশপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, দাশপাড়াতে পানচাষের জমির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কানি বা ৩০ হেক্টর। বেশির ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র চাষিরা বংশপরম্পরায় এ পেশা চালিয়ে আসছেন। পরিবার-পরিজনের প্রধান আয়ের উৎস এ পানের বরজ। ঘূর্ণিঝড় আমফান পরবর্তী ৩-৪ বার প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় দীর্ঘ সময়ে লবণাক্ত জলবদ্ধতায় শুধু দাশপাড়ায়ই ছয় শতাধিক পানের বরজ ক্ষতির শিকার হয়েছে।
সূত্র জানায়, চরকিং দাশপাড়া গ্রামের হিন্দু কর্মজীবী মহিলারা ২০ শতাংশ পান বরজের বিপরীতে সমিতি থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকেন। এ বছর বারবার জোয়ারে ডুবে থাকায় নতুন চাষ করা বরজের পানের লতা, বাজালি, মাটিসহ সব কিছু একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি বিক্রম চন্দ্র দাশ জানান, এক লাখ ২০ হাজার টাকা স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে নতুন পানের বরজ করেছেন। দৈনিক ৭০০ টাকা হিসেবে ৫০ জন শ্রমিকের মজুরি, বাঁশ-বাজালী, শণ, সার-খৈল-কীটনাশক ও ং নিজের শ্রম বাদে তার মোট এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচা হয়েছে। বছর শেষে তার বরজ থেকে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল কমপক্ষে চার লাখ টাকা।
দায়দেনা শোধ করে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভবিষ্যৎ সব সুখের স্বপ্ন খান খান হয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় আমফানে। সে সময় জোয়ারের পানিতে দিনের পর দিন পানের লতা নিমজ্জিত ছিল। পরবর্তীতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো মেরামত না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বারবার অস্বাভাবিক জোয়ারে লবণাক্ততায় তার মত আরো ছয় শতাধিক পানের বরজ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দাশপাড়ার পিল্টন দাশ তিন মেয়ে ও বাবা-মাসহ ছয়জনের পরিবারের প্রধান হিসেবে স্থানীয় জাগরণী সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। লিটন চন্দ্র দাশ এক লাখ ১০ হাজার টাকা দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা থেকে, রিনা রানী দাশ দুই লাখ টাকা হিড বাংলাদেশ থেকে, সূকর্ণ চন্দ্র দাশ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে, রাধা রানী দাশ ও তার ছেলে রাজীব এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে এখন মারাত্মক বিপাকে রয়েছেন। একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পান বরজের উৎপাদনহীনতা অন্য দিকে লাখ লাখ টাকার ঋণের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত পান বরজে পুনঃবিনিয়োগে ব্যর্থ কৃষকেরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, পানের বরজ কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা