০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নদীনালা পানিশূন্য

ঘিওরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ২৮ ফুট

জনজীবন ও কৃষিতে মারাত্মক সঙ্কট
বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তাই পাশের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করছেন কয়েকজন নারী, উপজেলার রাথুরা মণিদাসপাড়া গ্রাম (বাঁয়ে)। ঘিওরের বড়টিয়া গ্রামে পানির অভাবে শুকনো ধানক্ষেত। : নয়া দিগন্ত -


মানিকগঞ্জের ঘিওরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ২৮ ফুট নিচে। সেই সাথে তাপদাহে জনজীবন এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নদীনালায় পানি নেই। খালবিল, ডোবা, পুকুর শুকিয়ে চৌচির। সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘ দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভয়াবহ সেচপানি সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। এতে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দিয়েছে।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে সেচপাম্প চালানো যাচ্ছে না। যতটুকু সময় চালানো যায়, তাতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। মাঠের পর মাঠ বোরো ধান ক্ষেত শুকিয়ে খাঁখাঁ করছে। সকালে বোরো খেতে পানি দিলে তাপদাহে তা দুপুরের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা জানান, ফলন্ত ধান খেতে পর্যাপ্ত সেচ দেয়া না গেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই, অধিকাংশ কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এ দিকে বৈরি আবহাওয়ায় ঝরে পড়ছে মাঝারি আকারের আমের ও লিচুর গুঁটি।
তীব্র খরা ও বৃষ্টিহীনতায় সেচ যন্ত্রের পাশাপাশি টিউবওয়েলে সুপেয় পানি উঠছে না। ফলে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঘিওর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়ন এবং বড়টিয়া ইউনিয়নে সুপেয় পানির সঙ্কট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী পানিতে ২০২১ সালে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সিংজুরী, বানিয়াজুরী, বড়টিয়া, নালী, ঘিওর, বালিয়াখোড়া, পয়লা ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৫০০ টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করার পর সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক টিউবওয়েলে আর্সেনিক পায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। উপজেলায় সর্বোচ্চ প্রতি লিটারে ০.১৭২ মিলিগ্রাম আর্সেনিক এবং ১০.১ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে জানান তারা। এ ধরনের নানা সমস্যায় সুপেয় পানির সঙ্কট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে ঘিওর উপজেলায়।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। কিছু এলাকায় মানুষ ৫৫০-৬০০ ফুটেরও বেশি গভীরে নলকূপ বসিয়ে নিজ নিজ পরিবারের জন্য পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের বাড়িতে এবং তাদের কৃষি জমিতে তীব্র পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে ধানের চেয়ে চিটার পরিমাণ বেশি হবে।

ঘিওর উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জাকারিয়া কবির জানান, উপজেলায় সরকারিভাবে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে তিন হাজার ২৩৬টি এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে ৯৪৮টি। তার পরও সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর, তবে আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এভাবে লোডশেডিং ও বৃষ্টি না হলে তা এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিণ হয়ে পড়বে। খরা ও তাপদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনেও বিপর্যয় ঘটতে পারে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement