২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শরণখোলায় মিলন বাহিনীর অত্যাচারে দিশেহারা গ্রামবাসী

শতাধিক পরিবার এলাকাছাড়া
-

বাগেরহাটের শরণখোলায় মিলন বাহিনীর অত্যাচারে বাড়িতে থাকতে পারে না অনেক পরিবার। প্রতিবেশীদের সাথে জমিসংক্রান্ত বিরোধ, চাঁদাবাজি, জমিদখল, চুরি ও প্রতিবেশী মহিলাদের উত্যক্ত করাসহ মিলন বাহিনীর নানা অপকর্মে দিশেহারা গ্রামবাসী। বিভন্ন মহলে অভিযোগ দিয়েও মিলছে না প্রতিকার।
জানা যায়, মিলন তার অপর পাঁচ ভাইকে নিয়ে মিলন বাহিনী নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছে। মিলন ছাড়া গ্রুপের অন্যরা হলো- নেহরুল, মনির, ছগির, ও নজরুল। বাগেরহাটের শরণখোলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের ওই বাহিনীর অত্যাচারে শতাধিক পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন অনুসন্ধানে যান প্রতিবেদক। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে একত্র হয় গ্রামবাসী। প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী ফাতিমা বেগম জানান, স্বামী প্রবাসে থাকায় তার ১২ বিঘা জমি জবরদখল করে নেয় মিলন বাহিনী। তার ছেলে মুসা (৮) রাস্তায় বের হলেই ভয় দেখায়। তাই দুই বছর ধরে ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। অবশেষে ছেলেকে বাঁচাতে ১০ কিলোমিটার দূরে বোনের বাড়িতে রেখে আসেন তিনি। এ ছাড়া গত ১২ মে তার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল সেট ও স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় মিলন বাহিনী। এ বিষয়ে তিনি মামলা করলে তা প্রত্যাহারের জন্য নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে মিলনরা।
দেলোয়ার হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম বলেন, মিলন মারধর করে আমার চারটি দাঁত ভেঙে দিয়েছে। তারা হাঁস মুরগি ও দু’টি গরু নিয়া যায় তারা। তাদের ভয়ে এখন রাতে বাড়িতে থাকতে পারি না। পাশের তালাবদ্ধ একটি ঘর দেখিয়ে তিনি বলেন, হাফেজ হাওলাদারের ছেলে শহিদুলের স্ত্রী সুখীর ওপর মিলন বাহিনীর কু-নজর পড়ে। এরপর মানসম্মান ও প্রাণের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলায় চলে যান তারা।
গ্রাম ছাড়া ইউনুচের স্ত্রী হাসিনা বেগম মোবাইল ফোনে জানায়, রাতে ঘরের বাইরে বের হলে মিলন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় মামলা দিলে তার স্বামী ইউনুচকে মারধর করে এবং ঘরের মালামাল, হাঁস-মুরগি ও ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায় মিলন বাহিনী।
বৃদ্ধ আইউব আলী আকন বলেন, তার একটি গরু মিলনের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ অপরাধে তাকে টেনে-হেঁচড়ে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। ওই সময় মিলনের হাতে পায়ে ধরে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।
বেল্লাল, জাহিদ, জাহাঙ্গীরসহ অনেকে বলেন, সাবেক গ্রাম পুলিশ সামাদ হাওলাদারের আট ছেলের মধ্যে মিলন, নেহরুল, মনির, ছগির ও নজরুল মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, জমি দখল, ছিনতাই, নিরীহ মানুষদের মারধরসহ নানা অপরাধ করে চলছে।
মিলনের প্রতিবেশী বৃদ্ধ মালেক হাওলাদার ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, মেঝ ছেলে বিয়ে করলে তার স্ত্রীর ওপর মিলনের কু-নজর পরে। এ কারণে বউকে চট্টগ্রামে ছেলের কাছে পাঠাতে বাধ্য হই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নেয় মিলন ও তার লোকরা।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সুমন তালুকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলন বাহিনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কিছু নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসা, নিরীহ মানুষকে মারধর, গৃহবধূ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মারধর করে এলাকা ছাড়া করা হয়।
এ ব্যাপারে ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাঈনুল ইসলাম টিপু বলেন, মাদক, নির্যাতন, ধর্ষণ ও জমি দখলের বিষয়টি আমি অনেকবার পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। কোন এক অদৃশ্য শক্তির জোরে পার পেয়ে যায় তারা।
এ ব্যাপারে মিলন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। মিলনের ভাই নেহারুল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে জমিসংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, ওই এলাকায় দুইটি গ্রুপিং রয়েছে। তাছাড়া তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জমি বিরোধ ও মামলা চলে আসছে। তাই বড় কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে; সে জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে নিয়ে একটি বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement