০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাপাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে

সাপাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকেরা হনয়া দিগন্ত -

নওগাঁর সাপাহারে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি অর্থাভাবে এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
জানা গেছে লুৎফর রহমান নামের এলাকার এক শিক্ষিত বেকার যুবক এক সময় উপজেলা সদরে একটি কোচিং সেন্টার খুলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতেন। ২০১৭ সালের দিকে ওই যুবক লুৎফরের মাথায় একটি ব্যতিক্রমী চিন্তা আসে। সে থেকে তিনি উপজেলার অবহেলিত প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। এর পর তিনি সদরে অবস্থিত তার কোচিং সেন্টার ছেড়ে ওই ভাড়া বাসায় একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এর পর সমাজের বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষ এগিয়ে আসেন তার এই মহতী উদ্যোগে। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের খুঁজতে থাকেন তিনি। স্বল্প সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারে সমাজসেবা অধিদফতরের নজরে আসে। শুরু হয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী প্যাটান্ট পূরণের অভিযান এবং এক সময়ে প্যাটান্টটি পূর্ণও হয়। চলতে থাকে তার ভাড়াস্থ কোচিং সেন্টারে প্রতিবন্ধী বিদ্যলয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের পরিচর্যা ও লেখাপড়া শেখানোর কাজ।
শুরু থেকে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কোনো ধরনের চার্জ বা ফি না নিয়েই ওই প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা নিজ উদ্যোগে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালা করে আসছেন। এমনকি তারা তাদের দেয়া চাঁদার টাকা ও সমাজের বিভিন্ন লোকের দেয়া আর্থিক সহযোগিতা হতে প্রতিদিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের টিফিনেরও ব্যবস্থা করে থাকেন।
এর পর প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সমস্যা হলে সাপাহার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আকবর আলী ও তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ শামসুল আলম শাহ চৌধুরীর উদ্যোগে পরিষদ হতে তিনটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান অনুদান প্রদান দেয়া হয় বিদ্যালয়টিতে। এর পর অনেক ছেলেমেয়েদের আসা-যাওয়ার সমস্যা দূর হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সেই ভাড়া বাসা ছেড়ে আলহাজ শামসুল আলম শাহ চৌধুরীর উদ্যোগে উপজেলা সদরের মহিলা কলেজ রোডে অবস্থিত মহবুব উজ্জামান পাবলিক গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর বাসা ভাড়ার টাকা গুনতে হয় না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক মণ্ডলী ভবিষ্যত বেতন ভাতাদির আশায় বিনা বেতনে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে এলেও বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভ্যানগাড়িগুলো বিকল হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাংঘাতিক অর্থাভাবে তারা বিদ্যালয়ের নামীয় নিজস্ব জায়গায় বিদ্যালয় নির্মাণ ও বিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী ভ্যানগুলো সারাতে পারছে না। বর্তমানে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি চরম অর্থ সঙ্কটে পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। উপজেলার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের অভিভাবক ও বিনা বেতনে পাঠদানকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী মণ্ডলী সমাজের অবহেলিতে ও অসহায় প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের যতেœ এবং তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে দেশের কাজে লাগানোর জন্য সমাজের বিত্তবান ও সরকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement