১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৫০ শয্যার হাসপাতালে শুধুই প্রাথমিক চিকিৎসা

রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজন বিশাল। কিন্তু শুনশান নিরবতা চোখে পড়ার মতো : নয়া দিগন্ত -

খাগড়াছড়ির অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা রামগড়। রামগড়সহ পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেয়ার একমাত্র আশ্রয়স্থল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে টেকনেশিয়ানসহ সব কর্মস্থলে লোকবল সঙ্কট। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ছাড়া আর কোনো সেবাই বিদ্যমান নেই। সামান্য দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে যেকোনো অবস্থায় রোগীদের বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করাই এ হাসপাতালের প্রতিনিয়ত কাজ।
জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসক পদের সংখ্যা ১৩টি। কিন্তু বর্তমানে রয়েছেন মাত্র একজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত তিনজনকে সংযুক্তি দেয়া হলেও তাদের মধ্যে ডা: তাপস চৌধুরী কুমিল্লা মেডিক্যালে বদলি হয়েছেন এবং অপর চিকিৎসক ডা: মাহমুদ শাহ আবরার এক মাসের ছুটিতে আছেন। কর্মরত আছেন একমাত্র চিকিৎসক রোকসানা ইয়াসমিন এবং অতিরিক্ত চিকিৎসক নাসির উদ্দীন। তিনি ডেপুটেশনে সপ্তাহে দুইদিন রোগী দেখেন। এ ছাড়া চারজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে পুরো হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া ডা: মাসুমা তাবাচ্ছুমকে ডেপুটেশনে রামগড় দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সার্জারি, চক্ষু, গায়নি, অ্যানেস্থেসিয়া ও মেডিসিনসহ কোনো বিভাগে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মেডিক্যাল অফিসার ইওসি, আইএমও ও এমএমসি পদগুলো শূন্য। স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে জনবল সঙ্কট প্রকট। এ ছাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পাতাছড়া, হাফছড়ি ও রামগড় ইউনিয়নের লামকুতে সবকটি পদই প্রায় শূন্য। চিকিৎসক না থাকায় স্থানীয়দের ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।
হাসপাতালে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার দু’টি একদিনও চালু হয়নি। এক্সরে মেশিনটি বন্ধ। জেনারেটরটি বিকল। দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের একটি সচল।
হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হয়ছে।
রামগড় বাজারের মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জন্মের পর থেকে দেখেছি কখনোই এ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা ছিল না। হাতভাঙা রোগীকেও বিভাগীয় শহরে রেফার্ড করতে দেখি প্রতিনিয়ত। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীকে মারা যেতে দেখেছি।
দারোগাপড়ার সাহেনা আক্তার বলেন, গর্ভবতী মহিলাদের পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই চট্টগ্রাম কিংবা ফেনীতে নিয়ে যেতে হয়।
চিকিৎসক রোকসানা ইয়াসমিন বলেন, বহির্বিভাগে উপসহকারী কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে দৈনিক ২-৩ শ’ রোগী দেখতে হয়।
রামগড় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের জানান, রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। জেলার শুধু দিঘীনালা এবং মহলছড়ি হাসপাতালে টেকনেশিয়ান রয়েছে। তাদের রোস্টার পদ্ধতিতে সব উপজেলায় ডিউটি দেয়া হবে। আর অন্যান্য সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement