০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিংগাইরের হাতনী-রিফাইতপুর চক

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়েছে ৮০ বিঘা জমির ধান

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে হাতনীচকে ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে যাওয়া ধান ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক : নয়া দিগন্ত -

সত্তরোর্ধ মজিরন, স্বামী অসুস্থ। ধার-দেনা করে ৬ বিঘাা জমি বন্ধক রেখে সারা বছরের অন্ন জোগাতে ধান চাষ করেছিলেন। তার সে স্বপ্ন মাঠে মারা গেছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে ৪ বিঘা জমির ধান। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে এ চিন্তায় এখন তিনি দিশেহারা।
মজিরনের মতো সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের রিফাইতপুর ও সোনাটেংরা চকে সিদ্দিক খাঁর ৬ বিঘা, নবু খাঁর দু’টি ইরি প্রজেক্টে ২০ বিঘা, শাহজাহানের ২ বিঘা, ইসরাফিলের দেড় বিঘা, ইকবাল হোসেনের ২ বিঘা, সোহরাব হোসেনের দেড় বিঘা ও হানজালের ২০ বিঘা আধা পাকা ধান পুড়ে গেছে। তারা প্রত্যেকেই ওই চকে চলতি বোরো মওসুমে ধানের আবাদ করেছিলেন। দিগন্তজোড়া পাকা ধান তোলার পরিবর্তে ক্ষেতের আইলে বসে এখন আহাজারি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, জেডএবি নামক ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ওই চকের ৮০ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। চকটিতে রয়েছে জেডএবিসহ ডজন খানেক ইটভাটা। গত বছর সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিলেও এ বছর কর্ণপাত করছেন না বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ দিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধ শতাধিক কৃষক ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পুড়ে যাওয়া ধান দেখিয়ে এর প্রতিকার দাবি করেন।
একই দৃশ্য দেখা গেছে, পার্শ¦বর্তী জামির্ত্তা ইউনিয়নের হাতনী চকে। ওই চকের ফসলের মাঠে রয়েছে ৪টি ইটভাটা। এ বছর ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে ১৩০ বিঘা জমির ধান। কৃষকদের আহাজারি ও আন্দোলনে উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আশ্বাস দেন। হাতনী চকের ক্ষতিগ্রস্ত শকিল উদ্দিন, শওকত আলী, সায়েদ, ইউনুছ ও নুরুল হক বলেন, সর্বনাশা ইটভাটার ধোঁয়ায় আমাদের সারা বছরের আহার পুড়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আতঙ্কের ছাপ।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন বলেন, উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তাদের দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement