০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙনে আরো ১১ বসতবাড়ি বিলীন

চৌহালীতে যমুনা এভাবে গ্রাস করছে বিস্তীর্ণ এলাকা :নয়া দিগন্ত -

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত আরো ১১টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এদিকে জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন নাÑ এমন অভিযোগ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটানো নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে যমুনার তীব্র ভাঙন। প্রতিনিয়তই নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গত শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরে গিয়ে দেখা গেছে শাহজাহান আলী, ওসমান গনি, নজরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও আকলিমা খাতুনের বসতবাড়িতে যমুনার হিংস্র্রতা বারবার আছড়ে পড়ছে। তারা তাদের শেষ সম্বল টিনের চালা ও অন্যান্য আসবাব সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রচণ্ড রোদে খোলা আকাশের নিচে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছেন যমুনার দিকে। এছাড়া পাশেই একটি পাকা মুদিখানা দোকানের গ্রিল ও সাটার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মালামাল ভ্যানে তোলা হচ্ছে। এদিকে দানবীয় যমুনার রাক্ষুসী থাবার কাছে হার মেনে নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে খোলা ওয়াপদা বাঁধে অথবা অন্যের বাড়িতে। এ বিভিষীকাময় পরিস্থিতিতে কান্নার রোলে যমুনা পাড়ের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই দূরদূরান্তের শ’ শ’ মানুষ আসছে অসহায়দের দেখতে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যাচ্ছে না নদী তীর রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিতে।
নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জাকারিয়া হোসেন, তাহিরুল ইসলাম ও ছামাদ সরকার বলেন, প্রচণ্ড স্রোত তীরে এসে ঘূর্ণায়মান হয়ে চোখের পলকেই দাবিয়ে দিচ্ছে বিশাল বিশাল এলাকা। এ সময় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকের পাকা দালান, ঘরের ইট, লোহা নদীতে চলে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এত ভয়াবহ নদীভাঙনের খবর জানানো হলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা পাউবোর কোনো কর্মকর্তা এ এলাকায় আসেন না। শুধু সাংবাদিকেরা এসে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রশ্নÑ কাপড়ের হাট, তাঁতশিল্প কারখানা, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ এই বিশাল এলাকা রক্ষায় সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, নদীভাঙনের ভয়াবহতা এত বেশি যে, প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়ি অথবা স্থাপনা নদীতে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েও কোনো ফল না পেয়ে আমরা হতাশ। তিনি আরো বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো বিশাল একটি এলাকা নদীতে চলে যাচ্ছে অথচ কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। এভাবে ভাঙতে থাকলে এনায়েতপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষকে পথে বসতে হবে। দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সেইসাথে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প এলেই স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement