২২ মে ২০২৪, ০৮ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি

-

- একের পর এক উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড
- তাপে শ্রমজীবী মানুষের আয় কমছে
- হিটস্ট্রোকে অধ্যাপক ও শ্রমিকের মৃত্যু

তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। গতকাল এবছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বয়ে গেলো দেশের ওপর দিয়ে। ফলে উচ্চ তাপমাত্রার একের পর এক রেকর্ড হতে চলেছে বাংলাদেশে। অতিরিক্ত তাপে দেশে শ্রমজীবী মানুষের আয় কমে যাচ্ছে দিনের একটা বিশেষ অংশে কাজ করতে না পারার কারণে। গতকাল গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে হিটস্ট্রোকে এক শ্রমিক ও পিরোজপুরে এক অধ্যাপকের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার বামনা ও ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলায় কলেজের এক অধ্যাপকসহ ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় হাসপাতাল ও স্থানীয়ভাবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
যশোর ও চুয়াডাঙ্গা এলাকায় গত এপ্রিল মাসের প্রায় পুরো সময়ই বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল রেকর্ড করা হয় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে রেকর্ড করা হয় ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি উচ্চ তাপমাত্রার এ মৌসুমে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

এর আগে বাংলাদেশে আরো বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৮ মে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে। এটাই ছিল এ যাবৎকালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। তবে তাপমাত্রার এত খারাপ খবরের মধ্যেও গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া অফিস আগামীকাল বৃহস্পতিবার চলতি তাপপ্রবাহ দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রশমিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্য দিকে আগামী শুক্রবার দেশের কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এবং একই সাথে তাপপ্রবাহের তীব্রতাও কমে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস অবশ্য এই গরমের মধ্যে খুবই সতর্কতার সাথে পূর্বাভাস দিচ্ছে, পাছে পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত না হলে বেকায়দায় পড়তে হবে।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বাংলাদেশে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। শ্রমজীবী মানুষ অতিরিক্ত তাপমাত্রায় দিনের মধ্যভাগে কাজে বেরুতে পারছেন না বলে আয়-রোজগার কমছে। অন্য দিকে তাদের প্রতি নির্ভরশীল অন্যান্য শ্রেণিরপেশার মানুষও বেশ বেকায়দায় পড়েছে। অতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি গরমের কারণে সামাজিক অস্থিরতার সম্মুখীন হতে চলেছে বাংলাদেশ; কিন্তু প্রাকৃতিক এ বিষয়টিতে আপাতত কারো করার কিছু নেই। এক দিকে আয় কমে যাওয়া অন্য দিকে গরমে বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন রোগ মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগ-শোকে ব্যয় করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

বৈশাখ অর্থাৎ এপ্রিলের এই সময়টায় খুলনা বিভাগের এই অঞ্চলে প্রচুর তাপমাত্রা থাকে। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এমনটা ঘটছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এই সময়টায় বৃষ্টি না হওয়ায় আকাশ থাকে মেঘমুক্ত। তা ছাড়া সূর্য এ সময়ে লম্বাভাবে কিরণ দেয়। এসব কারণে প্রচুর তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে চুয়াডাঙ্গাসহ এর আশপাশের রাজশাহী, পাবনাসহ কিছু এলাকায়।
এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশে নয়, বাংলাদেশের আশপাশের অন্যান্য দেশের অবস্থাও একই রকম। বরং ওই সব দেশে আরো বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে। এটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মার্কিন প্রবাসী জুলি এ্যান রিগলি গ্লোবাল ফিউচার ল্যাবরেটরির সিনিয়র গ্লোবাল ফিউচার্স বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জেট স্ট্রিম বায়ুপ্রবাহের একটি সরু বাঁকানো অংশ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়। বর্তমান জেটস্ট্রিমের সরু অংশটি বাংলাদেশের উপরে থাকায় বাংলাদেশে এত গরম অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, স্থির হয়ে থাকে জেটস্ট্রিম বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচণ্ড তাপমাত্রার বাড়ানোর কারণ হচ্ছে। ড. রাশেদ চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগে থেকে বলে আসছেন যে, বর্তমানে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনু থেকে লা নিনায় পরিবর্তনের একটি পর্যায় চলছে। এই এল নিনু থেকে লা নিনায় পরিবর্তনের প্রবণতার সময় এর আগে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় হয়ে আসছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলা করতে হবে। এর আগে ১৯৯৫ সালের ১ মে চুয়াডাঙ্গাতেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি। ১৯৮৯ সালেও একবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল জেলাটির তাপমাত্রা। ওই বছরের ৪ মে তাপমাত্রা ৪৩.৩ ডিগি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর এবং খুলনা জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ২০ বছরের ব্যবধানে সব রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চলতি মৌসুমে এটিই চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে ২০০৫ সালে ২ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০১২ সালে ৪ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ দিকে টানা ১৯ দিন ধরে অব্যহত রয়েছে তীব্র থেকে অতীব্র তাপমাত্রা। গতকাল বেলা ৩টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের অনেক বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান।
চলমান তাপদাহে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষ। হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি নিয়ে প্রচণ্ড রোদে চুয়াডাঙ্গা শহরের ভ্যানচালক আবুল কাশেম বলেন, কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, টানা তাপপ্রবাহ এবার রাজশাহীতে ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। গতকাল বেলা ৩টায় রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে, দিনের এই তাপমাত্রা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বেলা ৩টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০০৫ সালের ২ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরও আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সেই রেকর্ড না ভাঙলেও ১৯ বছরের মধ্যে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো।
৩১ মার্চ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে রাজশাহীতে। সে দিন থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছেই। এ অবস্থায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সকাল থেকেই খুব জরুরি কাজ না থাকলে কেউ নগরীর রাস্তায় বের হচ্ছেন না।
রাজশাহী অঞ্চলের প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে পথঘাট। অনেক গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তীব্র খরার কবলে পড়ে দ্রুতই নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভের পানির স্তর। প্রায় অসহনীয় কষ্টে প্রতিটি দিন-রাত পার করছেন এ অঞ্চলের খেটেখাওয়া দিনমজুররা। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও গরমে হাঁসফাঁস করছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গতকাল বেলা ৩ টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল বগুড়ায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল জেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল।

এ দিকে উত্তরজনপদের ব্যস্ততম শহর বগুড়ায় তাপপ্রবাহের কারণে মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না। তাই দিনের বেলা শহর অনেকটা ফাঁকা।
সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় অসহনীয় গরমে অতি দরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচির শ্রমিক সরদার জহুরুল ইসলাম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
গত সোমবার সাদুল্লাপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠের পিছনে শ্রমিক সরদার জহুরুল ইসলামের অধীনে ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় শ্রমিকরা মাটি কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় ওই কাজ তদারকি করতে গিয়ে তীব্র গরমে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জহুরুল ইসলাম উপজেলার জয়েনপুর গ্রামের মকবুল হোসেন খাঁ ওরফে ছোট গেদার ছেলে। তিনি উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের অতি দরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচির জয়েনপুর গ্রামের শ্রমিক সরদার ছিলেন।
সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: সুরঞ্জন কুমার জানান, হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের কাউখালীতে চলমান তীব্র তাপে অসহ্য গরম পড়ছে। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি। বাড়ছে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই। বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টিহীন আকাশ। সারা দেশের মতো খরার কবলে পড়েছে কাউখালী। দিনে সূর্যের তীব্র তাপে কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যায় না। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে শরীর থেকে ঘাম ঝরে অনবরত। ঘাম বসে বুকে কফ জমে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও জ্বরে। বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
দাগনভুঞা (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলার মাতুভুঞা ইউনিয়নের করিম উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবদুল আজিম গতকাল মঙ্গলবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আদনান হাবিব নয়া দিগন্তকে জানান, ছেলেটির বাড়ি হিরাপুর গ্রামে। সে সকালে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে স্কুলে এসেছে। তখন আমার ক্লাস চলছিল। অতিরিক্ত গরম পড়ায় সে পানি খাওয়ার জন্য বাইরে যায়। পানি খেয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরে আমি ও অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ধরাধরি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। তার জ্ঞান না ফিরলে আমি নিজে তাকে দাগনভুঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। বর্তমানে সে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: তৌহিদুর ইসলাম জানান, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা চলছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাবনার তাপমাত্রা। আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে গড়ছে নতুন রেকর্ড। একদিকে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রার তাপদাহ অপরদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। সবমিলিয়ে পাবনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ শতাংশ।
বামনা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনা বামনা উপজেলা উপজেলায় হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকসহ চার শিক্ষার্থী তীব্র গরমে ক্লাস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টায় উপজেলার ৪ নং ডৌয়াতলা ইউনিয়নের আওতায় হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজ- এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলেজের অধ্যক্ষ মো: সফিকুল ইসলাম। প্রতিদিনের মতো অত্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন কলেজের আসার পরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শেষে শিক্ষক মিলনায়তনে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো: সফিকুল ইসলাম বলেন, সহকারী অধ্যাপকসহ ‘একাদশ’ শ্রেণীর ৩ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ১ শিক্ষার্থী তীব্র গরমে কয়েকবার বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমরা নিজ নিজ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের খবর দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছি। এখন সবাই কিছুটা সুস্থ। তিনি আরো জানান, এ ঘটনার সাথে সাথে বামনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অবহিত করেছি।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের রেললাইন বেঁকে গেছে। বিষয়টি নজরে আসায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ও এর যাত্রীরা। রেলওয়ের কর্মীরা বেঁকে যাওয়া অংশ মেরামত করে এবং রেললাইনের ওপর পানি ছিটিয়ে, কচুরিপানা ও কাদামাটি দিয়ে রেলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়িখোলা রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে চুয়ারিখোলার কাজীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে স্টেশনের আড়িখোলা স্টেশনমাস্টার দিলীপ দাস জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আড়িখোলা রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে চুয়ারিখোলার কাজীবাড়ি এলাকায় ঢাকাগামী (আপ লাইন) লাইনের প্রায় ১৫ ফুট রেল বেঁকে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর রেলওয়ের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা স্থানীয়দের সহায়তায় পানি, কচুরিপানা ও কাঁদামাটি দিয়ে রেললাইনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে ওই অংশ মেরামত করেন রেলওয়ের কর্মীরা। এ সময় ডাবল লাইনের অন্য লাইন দিয়ে ঢাকাগামী ট্রেন চলাচল করে। রেললাইন মেরামতের পর ওই লাইন দিয়ে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় হিটস্ট্রোকজনিত কারণে বিমল কৃষ্ণ ভদ্র (৫০) নামে এক সহকারী শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়িয়া নূরজাহান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক (কৃষি) পদে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়ীয়া গ্রামের মৃত ব্রজেন্দ্র নাথ ভদ্র এর ছেলে।
তার ভগ্নিপতি বীরেন বোস জানান, তিন দিন ধরে তীব্র তাপদাহে ভুগছিলেন শিক্ষক বিমল কৃষ্ণ ভদ্র। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হিটস্ট্রোকজনিত কারণে তিনি মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement