০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অপেক্ষা

-

সেই দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। যেন এই দু’দিন আগের কথা। অথচ চোখের পলকেই কেটে গেছে কত অমাবস্যা, কত পূর্ণিমা, কতটা বছর! ওটা ছিল একটি রৌদ্রস্নাত ঝলমলে দিন। সূর্য তার তীব্র, তীক্ষè এবং অতি উজ্জ্বল বেগুনি রশ্মি একত্র করে ঢেলে দিচ্ছিল ভেনিলা আইসক্রিমের সাদা মাখনে, যা গড়িয়ে পড়ছিল তার উন্মুক্ত কনুই বেয়ে।

গোল ফ্রকের নিচে হাফপ্যান্ট পরা ওড়নাহীন, খোলা চুলের চঞ্চল বালিকা। যার বুক এখনো সমতা হারায়নি। যার দৌড়ঝাঁপে এখনো জড়তা আসেনি। তাকে আমি দেখতাম স্কুলের ব্যাগ কাঁধে রাস্তার কিনারে, গোল্লাছুট খেলার মাঠে, সুজনদার চটপটির ভেনের সামনে কিংবা দুই চাকার আইসক্রিমের গাড়ির আশপাশে। দেখতে দেখতেই সে বড় হলো। খেলার মাঠ, চটপটির ভেন অথবা আইসক্রিমের গাড়ির কাছে তাকে আর দেখা গেল না। বহিরাগত সব অস্থিরতা আর চঞ্চলতা লুকিয়ে গেল। শরতের এক কোমল, জোছনা রাতে তাকে আমি নিজের কাছে আবিষ্কার করলাম। কাশফুলের শুভ্রতা আর জোছনার কোমলতা নিয়ে সে আমার সবচেয়ে নিকটে। কিন্তু আশ্চর্য! তার মধ্যে কোনো জড়তা নেই কোনো অস্থিরতা নেই। কোনো হতভম্বতা নেই। আছে শুধু জোছনার স্নিগ্ধতা, কাশফুলের শুভ্রতা, গোলাপের মিষ্টতা আর শিমুলের উষ্ণতা। আরো আছে হরিণীর চঞ্চলতা আর সারসের চতুরতা।
‘যাকে দেখার জন্য তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে আড়াই ঘণ্টা তাকে দেখতে এখন এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? দেখ, দেখ সে তার সব কিছু নিয়ে তোমার সামনে বসা! ‘সে আমার চিবুকে হাত দেয়। আহা, সেই কোমল ছোঁয়া! যা এখনো আমাকে উষ্ণতা দেয়। সেই রাতের এলবাম এখনো আমায় অক্সিজেন জোগায়। কত স্নিগ্ধ হাসি আর দুষ্ট চাহনি আজো জীবন্ত সেই এলবামের পাতায়।

তার দাবি, এটা একটা অসাধারণ রাত। জীবনে একবারই এই রাত আসে এতটা রোমাঞ্চ নিয়ে। তাই ‘নেশাগ্রস্ততায়’ এই রাত কাটিয়ে দেয়ার কোনো মানে নেই। সেই রাত শুরু হয়েছিল ঠিক ১২টায়। প্রথম দেড় ঘণ্টা ফটোসেশন। পরের এক ঘণ্টা জোছনা স্নান এবং বাকি রাত মোহগ্রস্ততা... সেই ৭০টা ছবির একটাকেও আমি অচল করিনি। আজো সেই ৭০টি ছবির সজীবতা, উজ্জ্বলতা, উষ্ণতা এবং মুগ্ধতা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। ক্ষণে ক্ষণে আমাকে বলে যায় ‘জীবন অনেক সুন্দর! অনেক!’

ছাদে চেয়ার পাতা ছিল। সে বলল, চেয়ারে বসব না।
বললাম, দাঁড়িয়ে থাকবে তাহলে?
না, শীতল পাটি নিয়ে আসব।
বললাম, যাও নিয়ে আসো।
বলল, না তুমি গিয়ে নিয়ে এসো। বিয়ের রাতে নতুন বউয়ের এত হাঁটাহাঁটি করা ঠিক না। কেউ দেখে ফেলে যদি! ও আচ্ছা!
পাটি নিয়ে এসে দেখি সে কাঁদছে। সংযত কান্না। গলা ধরা, চোখে অশ্রু আর ঠোঁটে হাসি। সেই হাসি ছিল জোছনার চাঁদের চেয়েও অনেক, অনেক এবং অনেক হৃদয়গ্রাহী। সে অনেকটা আছড়ে পড়ল আমার বুকে। নিঃসঙ্কোচ আর নিশ্চিন্তে। মায়ের কোলে শিশুর ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো কিংবা আরো অধিক নির্ভরতায়। আমরা হারিয়ে গেলাম গভীর আলিঙ্গনে। তার আগমনে আমার কাকের বাসা বাবুই পাখির কুটিরে পরিণত হলো। ময়নারা আমার চারপাশে গাইতে শুরু করল। ফুলেরা সুবাস ছড়াল। শত ব্যস্ততার মাঝে, দুনিয়া জোড়া রুক্ষতা আর শুষ্কতার মাঝে আমি পেয়ে গেলাম চিরসজীব এক বৃক্ষ, সদা বহমান এক ঝরনা।

আজো আমি বাইক হাঁকিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলার সময় তার উষ্ণতা অনুভব করি। ড্রাইভ করার মাঝে তার খোলা চুলের ঘ্রাণে অভিভূত হই। বারান্দায় বসে মেহগনি আর কড়ই গাছের বৃহৎ ডালে কাকের ঝগড়া দেখি। ছাদের চিলেকোঠায় বসে নীরবে দেখতে থাকি পাখিদের নীড়ে ফেরার দৃশ্য। জালের ভেতর আটকে থাকা পালিত কবুতরগুলোও ঠোঁটে ঠোঁট মিলায়। হয়তো সন্ধ্যার চুম্বন। তারপর বাক্সে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার গোধূলি রক্তিম হয়। তরপর শুভ্র। আস্তে আস্তে আঁধার ঘনিয়ে আসে। আলোক-প্রকৃতি নীরব হয়, সন্ধ্যা-প্রকৃতি জেগে ওঠে। পাখিরা ফিরে যায়, জোনাকিরা আসে। তারকারা হাসে। ঝিঁঝিরা ডেকে ওঠে। রাত গভীর হয়। ঝিঁঝির ডাক তীব্র ও তীক্ষè হয়। নিশাচরেরা আসে। বাদুড়ের ঝাঁপটা আর পেঁচার ডাক ভেসে আসে নিকটতম পেয়ারা বাগান থেকে। আমি বসে থাকি। নিকোটিনের ধোঁয়া আস্তে আস্তে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে জাগিয়ে দেয়। প্রথমে তার উপস্থিতি অনুভব করি, তার ঘ্রাণ পাই, তার হাসির শব্দ শুনি, তাকে দেখতে পাই, জড়িয়ে ধরি...
সূর্যের আঘাতে আমার ঘুম ভাঙে। রুক্ষ আর শুষ্কতার মাঝে আবার নিজেকে ফিরে পাই। আরো একটি রাতের অপেক্ষায় নিজেকে জড়িয়ে দেই হাজারো জঞ্জালে...


আরো সংবাদ



premium cement
তমা হত্যা : খুনি লিটনের ফাঁসির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন দুই ভারতীয় গুপ্তচরকে বহিষ্কারের প্রসাথে কী বলল অস্ট্রেলিয়া চীনে মহাসড়কে ধস, নিহত বেড়ে ৪৮ তাবলীগ জামাতের মুসল্লিদের ১৩ কেজি গরুর গোশত চুরি আন্তঃসীমান্ত নদীর বন্যার তথ্য আদান-প্রদান শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশ সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুলছাত্রীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ রোভার স্কাউট লিডার তৌহিদুজ্জামান নিপু ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশু অপহরণের একমাস পর উদ্ধার, এক দম্পতি গ্রেফতার আইসিজেতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমর্থন দেবে তুরস্ক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম লক্ষ্য সিরিজ জয় : শান্ত পেকুয়ায় বজ্রপাতে ২ লবণশ্রমিকের মৃত্যু

সকল