২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন তালতলা

-

বছর দশেক আগের কথা। যতটুকু মনে পড়ে তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। প্রাথমিকটা নিজ গাঁয়েই পড়া হয়। ছোটবেলায় ততটা চতুর ও দুষ্ট না থাকলেও খেলাধুলায় খুব একটা পিছিয়ে ছিলাম না। পাড়ার অগণিত বন্ধু থাকলেও দুই বন্ধুর সাথেই বেশি মেশা হতো। যার মধ্যে একজন ছিল কামাল, যে আমার সাথে একই শ্রেণীতে পড়ত। অন্যজন তানভীর, যে পাশের এক মাদরাসায় পড়ত। তিনজনের বাড়ি ছিল পাশাপাশি। বাড়ির প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি উঁচু জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তিনটি তালগাছ। যার নিচে ছায়ার সাথে সাথে সবুজ ঘাস দ্বারা বিছানাও তৈরি করা ছিল। আর তিন বন্ধু আসর জমানোর জন্য সে জায়গাটি বেছে নিলাম। সারা দিন যেখানেই থাকা হতো, পরন্ত বিকেলে সবাই তালতলায় এসে বসতাম। হরেক রকম খেলা, আড্ডা দেয়ার পর সূর্য আমাদের বিদায় দেয়ার সাথে সাথে আমরাও ওই স্থানকে বিদায় জানাতাম। নিত্যদিন একই রীতি, তবে শুক্রবার দিনটা ছিল ব্যতিক্রম ।
এ দিন সবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অন্যরকম খেলায় মেতে উঠতাম। বিভিন্ন লতাপাতা ও কাগজ দ্বারা নির্মিত ঘর বানিয়ে, এর ভেতর কাঁচা আম, কলা দ্বারা তৈরি ভর্তা খাওয়া। এ ছাড়াও ঘুড়ি বানিয়ে তার নাটাই ধরে বসে থাকা, চিরকুট বানিয়ে সুতার মধ্য দিয়ে ঘুড়ির নিকট পৌঁছানো ছিল শুক্রবারের অন্যতম আয়োজন। তিন বন্ধুর মাঝে এতই ভাব ছিল যে, বাইরের খাবারের বেলা সবাই সমান ভাগ করে খেতাম। একবার বন্ধু তানভীর কী কাণ্ডই না ঘটাল! তিন বন্ধু বসে আছি, পাশ দিয়ে একজন লোক হেঁটে যাচ্ছে কাঁচা আমের থোকা নিয়ে। আমি বললামÑ কাঁচা আম খেতে ভারি মজা, তাই না? পরদিন তানভীর অনেকগুলো আম নিয়ে সেখানে হাজির। হতবাক হয়ে আমি বললাম, তোর মা কিছু বলবে না? মিষ্টি হেসে বলল, মা তোদের জন্য পাঠিয়েছে।
সুখটা আর বেশিদিন স্থায়ী হলো না। প্রাথমিক শেষ হতেই সংবাদ এলো, মাধ্যমিকে পড়তে হবে নতুন কোনো গন্তব্যে। মনে হয় মাথায় বাজ পড়ল। বন্ধুদের বলতেই ওদের মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। গ্রাম ছাড়ার আগের দিন বিকেলে তালতলায় সবার চোখ ছিল রক্তিম সূর্যের মতো। এবার উঠতে হবে, স্মৃতি হিসেবে তিনটি তালগাছে খোদাই করা হলো প্রত্যেকের নামের প্রথম অক্ষর। পরদিন আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে বন্ধুরা যখন হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছিল, মনে হলো এটাই বুঝি শেষ দেখা।
কালের আবর্তে বন্ধুরাও স্থান পরিবর্তন করল। এরপর থেকে আর কখনোই সেভাবে তালতলায় বসার সুযোগ হয়নি। সেখানে গেলে এখনো থমকে দাঁড়াই। আজো তালগাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু থ্রি ইডিয়টসের আড্ডা আর নেই।


আরো সংবাদ



premium cement