আমাদের বাড়িতে একটা রেডিও ছিল। ছোটবেলায় মনে হতো, রেডিওটা যেন আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের তুলনায় ওর কদর ছিল বেশি। ছোটবেলায় রেডিওটা বন্ধ বা চালু করার কোনো এখতিয়ার আমাদের ছিল না। মা নিষেধ করতেন নষ্ট হওয়ার ভয়ে। কারণ, ওটা ছিল বাবার প্রিয় বস্তু । গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, ভরগ্রামে দু-একটা টিভি ছিল, মানে বিটিভি দেখা যেত। তাই গ্রামের মানুষের খবর আর বিনোদনের একমাত্র অবলম্বন রেডিও। যদিও সব পরিবারে তখনো রেডিও ছিল না। বাবা ছোটখাটো ব্যবসার সুবাদে হাটবাজারে ঘুরতেন। তাই আধুনিক প্রযুক্তির লাইট আর রেডিও ছিল তার নিত্যসঙ্গী।
আমাদের বাড়িতে কেউ কেউ আসতেন রাতের খবর শোনার জন্য। রেডিওর সামনে তারা উদগ্রীব হয়ে বসে থাকতেন। আমাদের কাছে খবরের গুরুত্ব ছিল না। তবে সন্ধ্যায় ‘দুর্বার’ অনুষ্ঠানে হাবিবুর রহমান জালালের জন্য অপেক্ষা করতাম।
সকালবেলা ‘মহানগর’ দুপুরে ছায়াছবির গানে মাজহারুল ইসলামের উপস্থাপনা। রোববার সকালে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গানের আসর শুনতাম।
ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিতে বাবার রেডিওটা একটা বিশেষ অনুষঙ্গ। সে সময়টায় আমাদের তথ্য এবং বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও বা বেতার যন্ত্র। রেডিও শুনতে শুনতে সারা দিনের সময়সূচিও মুখস্থ ছিল ।
রোজার মাসে ইফতারের আগমুহূর্তে ক্বারি সাহেবদের সুমধুর কুরআন তিলাওয়াত শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। ক্বারি ওবায়দুল্লাহর কণ্ঠে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সেই আজানের ধ্বনি ভোলার নয়। ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাও রেডিওতে শুনেছি। প্রয়াত খোদাবক্স মৃধা আর চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফতের দরাজগলায় বাংলাদেশের সেই জয় খুব উপভোগ্য ছিল।
বাবার এখনো একটা রেডিও আছে। পুরনো রেডিওটা নষ্ট হওয়ার পর তিনি অনেক কষ্ট করে এটা সংগ্রহ করেছেন। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় রেডিও হারিয়ে গেলেও এর আবেদন কিন্তু শেষ হওয়ার নয়। বাবার বিছানায় এখনো লাইট, রেডিও দেখে মনে পড়ে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা