ভারতীয় রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পেঁয়াজ। বিশেষ করে নিম্নবিত্তের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এটি খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এর দাম ওঠানামাকে কেন্দ্র করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকের ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে পড়ে যায়।
সঙ্গত কারণেই এবারেও পেঁয়াজের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনীতিকদের অনেকেই।
কিন্তু আসলে ভারতে পেঁয়াজ নিয়ে হচ্ছে কী?
এক কথায় দাম বেড়েই চলেছে।
গত অগাস্ট থেকেই ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তখন এক কেজির দাম ছিলো পঁচিশ রুপি।
আর অক্টোবরের শুরুতে এর দাম উঠেছে আশি রুপিতে।
সংকট মোকাবেলায় বিজেপি সরকার পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করে যাতে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমে আসে। এবং হয়েছেও তাই।
বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রে এশিয়ার সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ত্রিশ রুপির নিচে।
তবে তাতেও সবাই খুশী নয়।
একদিকে উচ্চমূল্যে যেমন ভোক্তারা ক্ষুব্ধ তেমনি দাম কমায় ক্ষুব্ধ রফতানিকারক ও কৃষকরা।
অন্যদিকে রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
আবার এটি শুধু ভারতের বিষয়ই না, রফতানি বন্ধ করায় সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেরও সাথেও।
বাংলাদেশ ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে।
পেঁয়াজ কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ
ভারতীয়দের খাদ্য তালিকায় পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ।
‘মহারাষ্ট্রে আর কোনো সবজি না পাওয়া গেলে মানুষ রুটির সাথে পেঁয়াজ যাকে কানডা ভাকারি বলে তা খায়,’ বলছিলেন খাদ্য গবেষক ড: মোহসেনা মুকাদাম।
তবে দেশটির কিছু অংশে কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় পেঁয়াজ খায়না।
কিন্তু উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এটি খুবই জনপ্রিয়।
আর এসব এলাকা থেকেই বেশির ভাগ এমপি ভারতীয় সংসদে যান নির্বাচিত হয়ে।
গবেষক মিলিন্দ মুরুগকারের মতে এটিই সরকারকে চাপে ফেলে দেয়।
আবার দাম কমে গেলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও গুজরাটে।
পেঁয়াজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন একজন সাংবাদিক দিপ্তি রাউত বলছেন, কৃষকদের জন্য মাঝে মধ্যে এটি এটিএম মেশিনের মতো এবং তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের বিষয়টি নির্ভর করে পেঁয়াজ উৎপাদনের ওপর।
পেঁয়াজ মাঝে মধ্যে ডাকাতের কবলেও পড়ে।
২০১৩ সালে দাম অনেক বেড়ে গেলে ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ চুরির চেষ্টা হয়েছিলো যদিও পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে ডাকাতরা।
রাজনীতিবিদরা কেনো এতো গুরুত্ব দেন পেঁয়াজকে?
এর কারণটা সহজ। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যেমন প্রয়োজনীয় এটি তেমনি কৃষকরাও এর উপরই নির্ভর করেন।
ফলে নির্বাচনী প্রচারেও বিষয়টি উঠে আসে গুরুত্ব সহকারে।
যখন দাম বাড়ে তখন দিল্লী রাজ্য সরকার পেঁয়াজ কিনে তা ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করে।
এমনকি পূর্ববর্তী সরকারের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা বিশেষ করে পেঁয়াজে ভর করে ১৯৮০ সালে ক্ষমতায়ও এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
এবার দাম বাড়লো কেনো?
সরবরাহ কম এবং এর কারণ হলো অতিবৃষ্টি ও বন্যা।
মজুদে থাকা অন্তত ৩৫ শতাংশ পেয়াজ নষ্ট হওয়ার তথ্য দিয়েছেন ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশনের ডিরেক্টর নানাসাহেব পাটিল।
তিনি বলেন বন্যার পানি দ্বিতীয় ধাপের উৎপাদনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ফলে সেপ্টেম্বরে প্রত্যাশিত পেঁয়াজ আসেনি।
মিস্টার মুরুগকার বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে এটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সমাধান কোথায়?
মিজ রাউত বলছেন, সংরক্ষণ সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যন্ত সঠিক পরিকল্পনা দরকার।
মহারাষ্ট্রের একজন কৃষক ভিকাশ দারেকার বলছেন, ‘দাম বেড়ে গেলে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু দাম কমে গেলে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়না কেন?’
তিনি বলেন রফতানি বন্ধ করা উচিত নয় যদি সরকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে চায়।
‘কখনো কি সফটওয়্যার রফতানির ওপর এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়?’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা