৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আফগান যুদ্ধে ‘ঠিকাদারি’ নিয়োগ!

আফগান যুদ্ধে ‘ঠিকাদারি’ নিয়োগ! - ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তান থেকে প্রায় অর্ধেক বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে মর্মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এখনো আদেশ নামায় স্বাক্ষর করা হয়নি। হঠাৎ বিপুল হারে সৈন্য প্রত্যাহার করা হলে আফগানিস্তানে সরকারি সৈন্যরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। এরই সমাধান মনে করা হয়েছে, বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। আমেরিকায় সরকারের সিআইএ’র পাশাপাশি অনেক প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তেমনি, কোনো অপরাধ তদন্তের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তদন্ত সংস্থাও পুলিশকে সহায়তা করে থাকে। সেরকম বেসরকারি বা প্রাইভেট মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিও রয়েছে। বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে আফগান যুদ্ধকে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়ার জন্য। এরিক ডি. প্রিন্স মনে করেন আফগান যুদ্ধ আমেরিকার নিয়মিত সেনাবাহিনীর কাজ নয়। দীর্ঘ ১৭ বছরের যুদ্ধ মানে এক দীর্ঘ সময়। বহু আগেই এর ফয়সালা হওয়া উচিত ছিল।

আফগানিস্তানে আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় পদক্ষেপই মার খেয়েছে। যে উদ্দেশ্যে এ অর্জনে যুদ্ধ তা অর্জনের জন্য এই যুদ্ধকে ‘নিয়মিত সেনার পরিবর্তে ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত’ এমন কথা বলছেন ঠিকাদার প্রিন্স। ইনি ব্লাকওয়াটার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। এই কোম্পানিকে সংক্ষেপে ব্ল্যাকওয়াটারও বলা হয়। অন্যজন হলেন স্টিফেন ফিনবার্গ, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক। তিনি ডিনকর্প ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ববাধিকারী। এই প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করে আসছে। তিনিও আফগান যুদ্ধের দায়িত্ব পেলে ‘সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত’ মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন।

ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স। এই প্রাইভেট সামরিক কোম্পানি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই সংস্থা কাজ করে আমেরিকার স্বার্থে। এর অন্য নাম ‘জি সার্ভিস’। ২০১১ সালে ‘একাডেমি’ নামেও পরিচিতি লাভ করেছিল। বড় ধরনের অপারেশন, সিক্রেট সার্ভিস অপারেটরদের বেসরকারি সেবা ও সহযোগিতা, সেনাবাহিনীর পক্ষে গুপ্ত অভিযান- এসব কাজ করে ব্ল্যাকওয়াটার সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হলেও নিষ্ঠুরতার জন্য বিশ্বে অর্জন করেছে কুখ্যাতি। এরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের নিরাপত্তাসেবাও দিয়ে আসছে ২০০৩ সাল থেকে। স্টেট ডিপার্টমেন্টে ২০১৩ সালে সিকিউরিটি সংক্রান্ত ৯২ মিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি পেয়েছিল। পরে অনেক সেনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের সাথে একীভূত হয়। প্রিন্স ক্যারোলিনা ভার্জিনিয়া সীমান্তে সাত হাজার একর জলাভূমি কিনেছেন দফতর স্থাপনের জন্য। জলাভূমির পানির রঙ কালো বিধায় প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন ব্ল্যাকওয়াটার। ১৯৯৮ সালে তিনি সেখানে বড় লজ তৈরি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করেন। কেন্দ্রটি আমেরিকার সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উপযোগী করে সবকিছু রাখা হয়েছে। তাছাড়া, সব ধরনের মোটরযান ও ট্যাংক পরিচালনা, অস্ত্র পরিচালনা, মিসাইল ছোড়া, নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দাগিরি এবং তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়। কাজের ধরন অনুসারে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অপারেটররা প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজার ঠিকাদারিও ব্ল্যাকওয়াটার পেয়েছিল। ইরাক যুদ্ধে অনেক স্থান ও স্থাপনা পাহারার ঠিকাদারিও এই সংস্থা সফলতার সাথে পরিচালনা করে। এরপর তাদের আফগানিস্তানে একই কাজে নিয়োগ করা হয়।

প্রিন্স তার পরিকল্পনা পেশ করেছেন। এর কিছু প্রকাশযোগ্য বক্তব্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকার অপএড হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে, হাজার হাজার মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার করে ঠিকাদারের ট্রুপ প্রতিস্থাপন করা। তাদের সহায়তা করবে বিশেষ এয়ার ফোর্স। ওদের এই মুহূর্তে বলা হচ্ছে ৯০-প্লেন প্রাইভেট এয়ারফোর্স। যুদ্ধ পরিচালনা করবেন ‘ভাইসরয়।’ যারা যুদ্ধ করবে, তারা একজন ভাইসরয়ের অধীনে কাজ করবেন। ভাইসরয় সরাসরি বার্তা দেবেন প্রেসিডেন্টকে। প্রেসিডেন্ট একটি ওয়ার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে জেনারেলদের সাথে শলাপরামর্শ করে ভাইসরয়কে বার্তা দেবেন। মূলত একজনই ঠিকাদারির মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। এই পদ্ধতি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের জাপান শাসন করার মতো। এই কাজের জন্য অবশ্য আফগানিস্তানকে ঠাণ্ডা করার জন্য প্রিন্স ও ফিনবার্গকে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার দিতে হবে। কোনো কাজের জন্য কৈফিয়ত তলব করা যাবে না, তবে পরামর্শ প্রদান করা যাবে। তারা বলেছেন, ওয়াশিংটনের ব্যুরোক্র্যাট জেনারেলদের দিয়ে এই যুদ্ধ করা সম্ভব হবে না। প্রাইভেট ফোর্স দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। সে যুদ্ধ যদি ‘অনন্তকাল’ও চলে, সমস্যা নেই। তাই ঠিকাদারিতে কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা যাবে না। প্রিন্স ঘোষণা দিয়েছেন, সময় যতই লাগুক, বিজয় নিয়েই ঠিকাদারির ফাইনাল বিল পেশ করা হবে। এখন ওয়াশিংটন মাসিক বা বার্ষিক যে অর্থ খরচ করে, তার মাত্র ৩০ শতাংশ প্রদান করলেই, অর্থাৎ ‘রানিং বিল’ পরিশোধ করলেই চলবে।

ভাইসরয় কে হবেন আর সৈন্য কোথা থেকে আসবে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান সৈন্য ও বেকার আমেরিকানদের কয়েক দিনের নোটিশে রিক্রুট করা হবে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন থেকে হাজার হাজার সৈন্য সংগ্রহ করা হবে। ওই সব দেশে যুদ্ধের ফলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এসব ভুখা-নাঙ্গাকে ভালো বেতন দিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করে এবং যুদ্ধের ময়দানে ছেড়ে দেয়া হবে। প্রত্যেক দলকে মিশন দেয়া হবে- ‘মারো অথবা মরো’। মারলে পাবে বেশি বেতন, সম্মান ও র‌্যাংক। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, আফগানদের যুদ্ধে আফগানের বিরুদ্ধেই ব্যবহার। যারা মিশন ঠিক মতো পরিচালনা করবে, তাদের জন্য রয়েছে অর্থ, বিত্ত ও চিত্ত। যে যত দাসত্বের পরিচয় দেবে তার তত উন্নতি। তাদের মতে, এশিয়া, আরব বিশ্ব ও আফ্রিকা থেকে এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য সংগ্রহ করা কঠিন হবে না। পেটের ক্ষুধা ও যৌন কামনার বেলায় মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো তফাত নেই। ব্ল্যাকওয়াটার সে তত্ত্বই প্রয়োগ করবে।

ভাইসরয়ের বিষয়ে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল প্রশ্ন তুলেছে, জবাবও দিয়েছে। প্রিন্স নিজেই ভাইসরয় হতে চান। প্রিন্স ইতোমধ্যে ইরাক যুদ্ধে ঠিকাদারির কিছুটা দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার সৈন্যরা বাগদাদ স্কোয়ারে জনসমাগমে গুলিবর্ষণ করে ১৭ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করেছিল। আজো এর কোনো জুতসই জবাব মার্কিন সেনাপ্রধানরা দিতে পারছেন না।

প্রিন্সের প্রস্তাবে কিছু সমস্যাও আছে। জেনারেল ম্যাকআর্থারকে ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান বরখাস্ত করেছিলেন। প্রাইভেট কোম্পানির রাষ্ট্রীয় বিষয়ে অংশগ্রহণেও সমস্যা আছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পাক-ভারত উপমহাদেশে অনেক ক্ষতি করেছে। পরে এই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। এরা ইংল্যান্ড থেকে নাপিত পর্যন্ত রিক্রুট করে বড় বড় পদে নিয়োগ দিয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে কোম্পানির কোনো দর্শন কাজ করেনি। এসবই ইতিহাসের বাস্তবতা। ব্রিটিশরা ১৭৭০ সালে কোম্পানির বিরুদ্ধে তৎপর হওয়ার ফলে সরকার ১৮৭৪ সাল কোম্পানির কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিল। প্রিন্স মনে করেন, ঠিকাদার দিয়ে শাসন ও যুদ্ধ করার উত্তম উদাহরণ হচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

তবে আফগানিস্তানে বেসামরিক ঠিকাদারের মাধ্যমে যুদ্ধ করা হলে সামাজিক অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে হু হু করে। এখনো নানা অপরাধে সরকারি ও বিদেশী সৈন্যরা জড়িত। সেনাবাহিনীতে জবাবদিহিতা, নৈতিকতা, সেনা সংস্কৃতি, জনপ্রতিরোধের ধারা- এসব বিষয় শেখানো হয়। তাই সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য শিক্ষিত, মার্জিত, ভদ্র ও দায়িত্বপরায়ণ। কিন্তু যেভাবে প্রিন্স সেনাবাহিনী গঠনের এবং ভাইসরয়ের ক্ষমতা চেয়েছেন তা একটি অনৈতিক দুর্বৃত্ত বাহিনীর জন্ম দেবে মাত্র। তারা নিজেরাই একসময় ফুঁসে উঠতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, ব্ল্যাকওয়াটার বাহিনী ইরাকে ও আফগানিস্তানে অনেক কাজ করেছে; কিন্তু কোথাও ভালো ফল বয়ে আনেনি। বরং বদনামের ফল ও ফসলই আমেরিকাকে দিয়েছে।

এরিক প্রিন্স মনে করেন, ঠিকাদারি সংস্থাই আফগান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুসারে, সরকারি বাহিনীর সাথে মিলে ঠিকাদার বাহিনী তালেবানদের বিরুদ্ধে কাজ করবে। মার্কিন সেনাদের জন্য আফগানিস্তান এখন অনিরাপদ স্থান। সমস্যা উত্তরণে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঠিকাদার বাহিনীই অবলম্বন হতে পারে। প্রিন্স আফগানিস্তানে ফ্রন্টিয়ার সার্ভিস গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন। তাই তার বক্তব্য ও পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।

আফগানিস্তানে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিপালিত ও অনুসৃত হয়ে থাকে। মানুষের মনে ও মগজে ইসলামী ভাবধারা লালিত ও পালিত। পশ্চিমা সভ্যতা এবং এর ফসল, নানা নীতি ও মতবাদকে আফগানরা পছন্দ করে না। অনেকে এসব মতবাদকে ‘কুফরি’ মতবাদ বলেন। লোকজন তা বিশ্বাসও করে, বিতর্ক করে না এ নিয়ে। তাই আফগান ও তালেবানরা বিদেশী সৈন্য ও তাদের দোসরদের মোটেই সহ্য করতে পারছে না। যা কিছু করা হোক, তার আগে আফগানরা চায় বিদেশীরা চলে যাক ‘দালাল’রা ক্ষমতা ছেড়ে দিক। সোজা কথা, আফগানদের মগজ ধোলাই করা আমেরিকানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ১৭ বছর পর নিয়মিত সেনার পরিবর্তে ঠিকাদারের সৈন্যরা রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ আফগানিস্তানে করতে সক্ষম হবে না, এটাই অনুমিত হচ্ছে।

সম্ভাব্য ঠিকাদারি যুদ্ধে উভয় পক্ষই আফগানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তা হলো ‘জেহাদি চেতনা’। সরকার সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার করে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে হাত করতে চাইবে। তালেবানরাও ‘কুফরি’ মতবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এই চেতনা ব্যবহার করবে। সতের বছরেও তালেবানদের শেষ করা যায়নি, তাই তাদের শেষ করার মার্কিন পরিকল্পনা কাজ করবে না পরমাণু বোমা ব্যবহার করা ছাড়া। অর্থাৎ আরেকটি নাগাসাকি বা হিরোশিমা তৈরি করা ছাড়া তালেবানদের শেষ করা যাবে না। তবে এই বোমা ব্যবহারে আফগানিস্তানের খনিজসম্পদ ধ্বংস হবে বিধায় সেটিকে সমাধান হিসেবে মার্কিনিরাও পছন্দ করছে না। এখন তাই আফগানিস্তান ছাড়ো পন্থাই উত্তম।

পাকিস্তানের সাংবাদিক আহমদ রশীদ জানান, পাকিস্তানে চালু রয়েছে ২৩ হাজার মাদরাসা। এখানে ছাত্রছাত্রীরা ইসলামী জ্ঞানে পরিপুষ্টি লাভ করছে এবং জেহাদি চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে। তাদের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস জীবনের চেয়ে মূল্যবান। তাদের অনেকেই পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে বা অন্য কোনো মুসলিম দেশের স্বাধীনতা, ইসলাম ও মুমিনদের জন্য জেহাদ করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প এ জন্যই আফগানিস্তানে হাফেজে কুরআনদের মাদরাসায় বোমা মেরে একই সাথে শতাধিক নিরীহ নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছেন। ইমরান খান এই বিশাল জনগোষ্ঠির সমর্থন লাভের জন্য ধর্মীয় প্লাটফর্ম ব্যবহার করেছেন। তিনি চান মাদরাসা থেকেও ডাক্তার, প্রকৌশলী, প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তা প্রমুখ বের হোক। এ জন্য বাস্তব কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানদের জ্ঞানের মহাসড়কে তুলতে চান।

পশ্চিমারা এটা পছন্দ করছে না। এখন হাজার হাজার আফগান উদ্বাস্তু পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। তাদের সাথে আফগান তালেবানদের সম্পর্ক থাকা বিচিত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে তালেবান সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন; তাই সেটা বাস্তবতার আলো দেখছে না। পাকিস্তান বলে দিয়েছে, তাকে বাদ দিয়ে তালেবান শান্তি আলোচনা সফল হবে না। এখন সেটিই প্রমাণিত হচ্ছে। আশরাফ গণি বলেছিন, পাকিস্তানের কারণে তালেবান সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আসলে এটি এর আফগান প্রেসিডেন্টের কথা নয় মার্কিনিদের শিখিয়ে দেয়া বুলি।

যুদ্ধ ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দেয়া ‘প্রক্রিয়াধীন’ বলে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। যতই এর বিরুদ্ধে বলা হোক না কেন, আফগান জনগণ এই ‘ফেতনা’র মধ্যে পড়তে পারে। এই ঠিকাদারেরা ওয়াশিংটনের বিশ্বস্ত। সিআইএ’র সদর দফতর পাহারার ঠিকাদারির মাধ্যমে এদের যাত্রা শুরু। বিশ্বস্ততার সাথে ব্ল্যাকওয়াটার ঠিকাদারের কাজ শেষ করতে পারায় উচ্চ পর্যায়ের সিকিউরিটি মিটিংয়েও প্রিন্স দাওয়াত পান। আফগানিস্তানে ওয়াশিংটন কী চায়, ট্রাম্প কী চেয়েছেন তার সবকিছু নখদপর্ণে। এজন্য সম্ভব হয়েছে এ ধরনের বিশাল পরিকল্পনা যুদ্ধ আলোচনার টেবিলে ছেড়ে দিতে। ট্রাম্প এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তালেবানেরা বলেছে, যারা মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের সাথে ১৭ বছর ধরে যুদ্ধ করেছে তারা লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর সাথে ‘ভিন্ন ধরনের’ যুদ্ধ শুরু করবে। তালেবানেরা জানে ব্ল্যাকওয়াটার কিভাবে কাজ করে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণিকে প্রিন্স ২০১৭ সালে প্রাইভেট সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করার বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করতে সাক্ষাৎকারের অনুমতি চেয়ে অনুরোধ পত্র প্রেরণ করেছিল। গণি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে প্রিন্স থেমে নেই। আরব আমিরাতের অফিসে আফগান নেতাদের সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে গণির নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, এমন কাছের লোকজনও রয়েছে। গণিকে প্রিন্স সংবাদ পাঠিয়েছেন, আফগান রাজনীতিতে তিনি ‘মোটেই উৎসাহী নন’। তার উদ্দেশ্য তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তা যেভাবেই হোক।

গণি ঠিকাদারি যুদ্ধের সব প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছেন। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডেন্ট গণি বলেছেন ‘আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ আর কাউকে লুট করতে দেয়া হবে না।’ তার সরকারের প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী তামিম আসি বলেছেন, ব্ল্যাকওয়াটারের অনেক দুর্নাম। এরা এলে জনগণ সম্মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। প্রিন্সের পদক্ষেপ আফগান সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো নয়। এ ধরনের বড় ও ব্যাপক যুদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আফগান প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’ অনেক দেরি হলেও গণি উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের মহাসড়কে ফিরে এসেছেন। তবে সেটা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য, নাকি শান্তির জন্য, তা নির্ধারণের সময় এখনো আসেনি।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব
বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
চলতি সপ্তাহেই গ্রেফতার হতে পারে নেতানিয়াহু সিংড়ায় তাপদাহে শ্রমিকদের পাশে পরিবেশ কর্মীরা চেলসি ছাড়ার ঘোষণা দিলেন থিয়াগো সিলভা ৪৩ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেল পাবনার তাপমাত্রা আবুল কাশেম ও শাহনাজ পারভীনের ইন্তেকালে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের শোক বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সরে দাঁড়ালেন আ’লীগের প্রার্থী যশোরে ইজিবাইকচালকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার পদত্যাগ করুন দেশের মানুষকে বাঁচান : সরকার‌কে ফারুক ‘জয়বাংলা ব্লাড স্কিম’ রাবি ছাত্রলীগের সিট দখলের নতুন কৌশল ইসরাইলি পণ্য বয়কট : মালয়েশিয়ায় কেএফসির শতাধিক আউটলেট বন্ধ গাজায় বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়েছে ১০ হাজারের বেশি লাশ

সকল