৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শঙ্কার নাম ব্যাটিং

-

বেদনা এবং হতাশাময় নিকট অতীতের অন্ধকার দিনগুলোকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আনন্দে হেসে উঠল। ত্রিদেশীয় টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে নানান ঘটনার ঘনঘটা ঘটিয়ে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিলো টাইগাররা। বৃষ্টিস্নাত দিন শেষে রাতের চাদের রুপালি আলোর পরশ গায়ে মেখে জ্বলে উঠেছিলেন আফিফ হোসেন। তারুণ্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ উইলোর নাচন হিসেবে মিরপুর স্টেডিয়ামের সবুজ ক্যানভাসকে আলোকময় করে তোলেন তিনি। তার ২৬ বলের ঝড়ো ৫২ রান বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেয়। দুই বল বাকি থাকতেই জয়ের দেখা পায় তারা। এই জয়ের পেছনে রয়েছে মোসাদ্দেকের অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংস। না হলে ৬০ রানে নামীদামি অভিজ্ঞ ৬ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বাংলাদেশ পরাজয়ের খাদের কিনারায় সময় গুনছিল আরেকটি পরাজয়ের জন্য। কিন্তু আফিফ এবং মোসাদ্দেক যা করলেন তা এক কথায় অনবদ্য। দুর্দান্ত এবং অসাধারণ। টি-২০ ক্রিকেটের চরম অনিশ্চয়তার এক অনুপম সৌন্দর্য অবলোকন করল এ দেশের অগণিত ক্রিকেটামোদী। একটি জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বদলে দেবে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের এই উক্তির বাস্তবচিত্র টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের বাকি দিনগুলোতে দেখা যাবে সেই প্রত্যাশা সমর্থকদের।
তবে উদ্বোধনী ম্যাচে জিতলেও শঙ্কার কালো মেঘ কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কারণ চট্টগ্রামে টেস্টের নবীন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্র ছিল করুণতম। আফগান ব্যাটসম্যানদের চেয়ে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা সাকিব বাহিনীর কোনো ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির দেখা পাননি। খেলতে নেমে উইলো হাতে আনাড়ির মতো আউট হয়েছেন। নিজ দেশের চিরচেনা মাঠে টাইগার ব্যাটসম্যানদের এই বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হতে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ত্রিদেশীয় টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতার নাগপাশে বন্দী হয়েছে। জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ করা ১৪৪ রান টার্গেট হিসেবে তেমন কঠিন ছিল না। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে সাকিব বাহিনী। যে মাঠের সবুজ ঘাসের সাথে সখ্যতা সেখানে এলোমেলো হয়ে যায় টাইগারবাহিনী। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লিটন দাস এবং সৌম্য সরকারের শুরুটা ভালোভাবে এমন আশা করা নিশ্চয় সাকিবের জন্য অতিরিক্ত নয়। কিন্তু তা হলো না। জিম্বাবুয়ের সাদামাটা বোলিংয়ের বিপক্ষে ছন্নছাড়া ব্যাটিং উপহার দিলো তারা। দলীয় ২৬ রানে লিটন দাসের চলে যাওয়া। তারপর সৌম্য। এরপর সাজঘরে ফিরে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠা। একে একে সাকিব, মুশফিক, মাহামুদুল্লাহ, সাব্বির এই মিছিলে শামিল হলেন। পরাজয়ের আশঙ্কায় আবর্তিত হতে লাগল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গর্বের স্থান হচ্ছে ব্যাটিং। বিশ্বকাপে এই ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। যারা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দাপট দেখিয়েছেন তারা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলেন। সেই রেশ এখনো চলছে। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল দলে নেই। কিন্তু অন্যরা তো রয়েছেন। তারা কেন পারছেন না। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কোনো কাজেই আসছে না। জিম্বাবুয়ের বোলাররা এমন কোনো আহামরি নামীদামি নন। তাদের বিরুদ্ধে খেলতে যা করেছে তাতে লজ্জা পাওয়া ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই।
ব্যাটসম্যানদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টি বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে বিশেষ কাজ করবে। আফিফ এবং মোসাদ্দেকের ব্যাটিংশৈলী বাকিদের প্রেরণা জোগাবে। টি-২০ ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠাটা একটি দলের জয়ের পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সব শঙ্কাকে পদদলিত করে উইলো হাতে কারিশমা দেখাতে হবে। আজ বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রতিপক্ষ কিন্তু অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে টি-২০ ক্রিকেটে তারা দুর্দান্ত। ফলে তাদেরকে সহজভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া একমাত্র টেস্টে হেরে যাওয়ার বেদনা তো রয়েছেই। তাই আফগানদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেয়ার দৃঢ়তা সাকিব বাহিনীকে নতুন রূপে খেলার মাঠে দেখা যাবে। ব্যাটিং ব্যর্থতার ঘেরটোপ থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের জাত চেনাবে সেই বিশ্বাস সমর্থকদের রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement