২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রি য় স্মৃ তি

-

পরিচয়

আজ মেস থেকে বের হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। ধর্মঘট দেরির দূরত্ব আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। তাড়াতাড়ি হাঁটতে হবে। কলেজে আজ প্রথম ক্লাস শাহাবুদ্দিন স্যারের। স্যারকে সবাই এক নামে চেনে। স্যার অন্যান্যদের চেয়ে একটু বেশি কড়া। ক্লাসে কথা বলেছে আর চড়-থাপ্পড় মিস হয়েছে এমন ঘটনা ইতিহাসে নেই। স্যারের যুক্তি হলো, সরকার বলেছে আঠারো বছরের কমবয়সী হলে বেত দেয়া যাবে না, তোমরা সবাই আঠারোর ঊর্ধ্বে।
ক্লাসের দরোজায় দাঁড়িয়ে ভীতু কণ্ঠে বললাম, ‘মে আই কাম ইন স্যার’? উত্তরে ‘ইয়েস’ জেনে ভয় দূর হলো। উপস্থিতি ততটা ভালো নয় বলে প্রথম দিকেই সিট পেলাম। বিশ মিনিটের মধ্যে স্যারের ক্লাস শেষ হলো। আর ক্লাস বারোটায়। আধঘণ্টার মতো ব্রেক এখন। ডিপার্টমেন্টের তেমন কারো সাথে পরিচয় নেই, কথাবার্তাও নেই। আজ কথা বলাবলির দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্টুডেন্টসও কম, সময়টাও ব্রেক। কয়েকটা ক্লাসমেটের নাম আর কন্টাক্ট নাম্বার সংগ্রহ করছিলাম। ওই দিক থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ চমকে দিলো, ‘আপনার নাম’? একটু নড়েচড়ে বসলাম, ‘জ্বি আপু, রেদ্বওয়ান।’ এত শান্ত আর লাজুক টাইপের ছেলেটা দেখে ওরা হাসাহাসি করছে।
আজ অনেক বন্ধুর সাথে পরিচয় হলো, অপু, অনিক, ফাতেহা, শুয়েব, কাওছার আরো কয়েকজন। ক্লাসের সময় একদম কাছাকাছি, নাজিয়া বলে উঠল, ‘এই, কেউ তুমি-আপনি বলবা না কিন্তু। তুই বলতে হবে।’ এবার সবাই মুচকি হেসে তাকে সমর্থন জানাল।
রেদ্বওয়ান মাহমুদ
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট

অ্যাসেম্বিলির শপথ পাঠ

নিজের শৈশব-কৈশোরকে মিস করে না এমন মানুষ পাওয়া যায় না। বাঙালি সমাজে ওই শিশুকাল বাল্যকাল কাটে খেলাধুলা আর স্কুলে গিয়ে। তাই এই দুই গণ্ডির স্মৃতিই মানুষকে তাড়িত করে বেশি। নিশ্চিন্ত আর চঞ্চলমতি এই বয়সটাকেই তাই সবাই ফিরে পেতে চায় বার বার করে। স্কুলের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে হলে আমিও তেমন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
প্রাইমারি স্কুলের সীমানাঘেঁষেই ঠিক আমাদের বাড়ি। স্কুলের মাঠ আর আমাদের উঠোন যেন একই শরীর। দূরের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ঢুকতে দেখেই দৌড়ে ক্লাস ধরতে পারতাম। ক্লাস-টিফিন-ছুটির ঘণ্টাধ্বনি বিছানা থেকেও শুনতে পেতাম। ঘণ্টার শব্দ শোনে কতদিন যে খালি পায়েই দৌড়ে গিয়ে অ্যাসেম্বিলি ধরেছি তার ইয়াত্তা নেই। অ্যাসেম্বিলির সেশনটা আমি খুব পছন্দ করতাম। মনে আছে, শুরুতে স্যাররা বেত নিয়ে আমাদের সোজা করে দাঁড়িয়ে দিতেন। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে শপথবাক্য পাঠ করতাম। শপথবাক্য পাঠের সময় সবাই বাম হাতটা বাম পায়ের সাথে লাগিয়ে মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত বুক বরাবর সামনে দিয়ে পাঠ করতাম, আমি ওয়াদা করিতেছি যে... তারপর কী সুন্দর সুন্দর কিছু বাক্য সমস্বরে আওড়িয়ে হাত নামাতাম। শপথবাক্য উচ্চারণের সময় একটা আত্মশক্তি কাজ করত, দেশের প্রতি ভালোবাসা কাজ করত, মনের ভেতর নৈতিকতা জাগ্রত হতো। ছোটবেলা এত ভালো না বুঝলেও এখন সেটা ঠাহর করতে পারি। তারপর জাতীয় সঙ্গীতের চার লাইন গেয়ে সংক্ষিপ্ত পিটি (ফিজিক্যাল ট্রেনিং) করে দৌড়ে আবার নিজ নিজ ক্লাসরুমে ফিরে যেতাম।
এখন প্রাইমারি শেষ করে, মাধ্যমিক পাস করে, উচ্চ মাধ্যমিক সাঁতরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছেছি। এখনো সূরা ফাতিহার তেলাওয়াত শুনতে পাই, জাতীয় সঙ্গীতও মাঝে মধ্যেই গাওয়া হয়, পিটি না করলেও সময় পেলে বিকেলে জিমনেশিয়ামে যাওয়া হয়। কিন্তু শপথ বাক্য আর শুনতে পাই না। সম্ভবত বড় হয়ে গেছি তাই। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন ছোটবেলায় ফিরে যাই তখন ছোট্ট আমি আমাকেই বলি, আত্মবিশ্বাস, দেশপ্রেম, নৈতিকতার শপথ কি শুধু ছোটবেলার জন্য? এ জন্যই কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ওগুলোর বিপরীত চিত্র দেখতে হয়? মনে হয়, এখনো যদি প্রতিদিন শপথবাক্য পাঠ করতে পারতাম!
অনি আতিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement