০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দৃষ্টিপাত : একটি ব্রিজ ও বীমা শিল্পের ফিরিস্তি

-

সরকারের উন্নয়নের চিত্র বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও পদ্মা ব্রিজ আমাদের চোখে পড়ে। ভালো কথা, এমন উন্নয়ন হয়েছে কিছুটা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে সিলেটের পথে তিতাস নদীর ওপর যে ব্রিজটি ১০ দিন ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে; সরকারের কোনো ঠিকাদার বা কোনো দফতর কেউ মেরামত করতে এগিয়ে আসছে না। অপর দিকে স্বাধীনতার পর থেকে ওই পথে পাথরবোঝাই কয়েক লাখ ট্রাক সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও জাফলং থেকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পাথর নিয়ে ব্রিটিশ আমলের ব্রিজটি দিয়ে পার হলে তাতে ব্রিজের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু ধারণক্ষমতার বেশি অসংখ্য ট্রাক ওই ব্রিজ দিয়ে আসা-যাওয়া করেছে। অনেকের হয়তো পকেট ভরেছে; কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ কি দায়িত্ব পালন করেছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়েছিলাম। ব্যবস্থাপনার প্রথম নীতি হলো ‘পরিকল্পনা’ আর ‘নিয়ন্ত্রণ’। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স্বাধীনতার পর কত বার্ষিক পরিকল্পনা করেছে, অথচ সবই অশ্বডিম্ব। দুঃখ লাগে তখন, যখন দেখি ব্যাংকগুলোতে কত অব্যবস্থাপনা। আর পরিকল্পনা করা হয়Ñ কিভাবে লুটপাট করা হবে। নেই কোনো দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ। ছয় বছর আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালনা পর্ষদ থেকে পরিচালক যারা অপছন্দের ছিলেন, তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়। এতে ব্যাংকগুলো লুটপাট করা সহজ হয়। আর সংসদেও কথা হচ্ছে ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে। কেন এত খেলাপি ঋণ? লাখ লাখ পাথরবোঝাই ট্রাক থেকে যদি সামান্য পাথরও রাখা হতো তাহলে ওই পাথর দিয়ে একটি নতুন ব্রিজ তৈরি করা যেত শাহবাজপুরে। আরেকটি ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, এতে দীর্ঘ সময় লাগছে কেন? বীমা শিল্প নিয়ে কথা বলতেই হয়। ছোট একটা দেশে এতগুলো বীমা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান সরকার গঠন করেছিল, যার নাম ‘আইডিআরএ’। আগে লোকবল সঙ্কট ছিল। সরকার একজন সচিবকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি খুব অভিজ্ঞ ব্যক্তি। এ দেশে গার্মেন্ট সেক্টর আবির্ভাবের পর ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা ব্যাংকের ঋণে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, তার সুষ্ঠু বীমাকরণে ঝুঁকি নিরসনকল্পে ভালো কোম্পানির সাথে বীমা করলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির ক্ষতিপূরণ পায় যদি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। কিন্তু এখন মাছের বাজারের মতো বীমা শিল্পের অবস্থা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বা ব্যবসায়ীরা চায় ভালো বীমা কোম্পানিতে বীমা করার জন্য, যাতে তাদের ক্ষতিপূরণ তাড়াতাড়ি পাওয়ার যায়। কিন্তু ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বা অ্যাডভান্স ডিপার্টমেন্টের কিছু কর্মকর্তা এজেন্ট হিসেবে ঢুকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত তুলে নিজেদের আখের ঘোচাচ্ছে, যা সরকারের সুষ্ঠু নীতিমালার পরিপন্থী। এতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, লাইসেন্সধারী এজেন্টরা ১৫ শতাংশ হিসাবে কমিশন পাবে। তাই বীমা শিল্পের সমস্যার প্রতিকার করা সরকারের একান্ত কর্তব্য ও অতীব জরুরি বিষয়। সরকার প্রধান বলছেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বীমা বাধ্যতামূলক করা হবে।’ কিন্তু সব ক্ষেত্রে দালালি। ব্যাংকগুলোতে তো আছেই, সাথে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বীমা শিল্প নিয়েও একপ্রকার দালালি করা হয়। এ অবস্থা চলতে দেয়া যাবে না।
এস. আহমেদ (নিউ ইয়র্ক প্রবাসী)


আরো সংবাদ



premium cement