২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যাজককে মুক্তি দিলেও তুর্কি পণ্যে শুল্ক বহাল রাখবে যুক্তরাষ্ট্র ১৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার

যাজককে মুক্তি দিলেও তুর্কি পণ্যে শুল্ক বহাল রাখবে যুক্তরাষ্ট্র ১৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার - ছবি : সংগৃহীত

তুরস্কে আটক মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্র্যানসনকে নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হলেও হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে তাকে মুক্তি দিলেও অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হবে না। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স এসব কথা জানান। তবে মার্কিন প্রশাসনের চাপ সৃষ্টি সত্ত্বেও তুরস্কে দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা করেছে কাতার।

মার্কিন যাজক আটকের ঘটনা থেকে সম্প্রতি তুরস্ক ও আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মার্কিন সরকার তুরস্কের দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মার্কিন আইনমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন এরদোগান। এরপর গত শুক্রবার তুরস্কের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য আমদানির েেত্র দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তবে সারাহ স্যান্ডার্স দাবি করেন, তার মুক্তির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্যাস্টর ব্র্যানসন ও অন্যদের মুক্তি দিলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্কের শুল্ক বাড়ানোর ঘটনায় স্যান্ডার্স বলেন, এটি নিশ্চিতভাবেই দুঃখজনক ও ভুল পদপে। মার্কিন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রুনসনকে গ্রেফতার করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে টানাপড়েন অনেক জটিল হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে তুরস্কের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ব্রুনসনর মুক্তি দাবি করছে আর তুরস্ক বলছে সে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলে আসছেন, ব্রানসনকে ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ফেতুল্লাহ গুলেনকে ফেরত চায় তুরস্ক। ফেতুল্লাহ গুলেনকে ওই অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিহিত করে থাকে তুরস্ক।

এ দিকে তুরস্কের ওপর মার্কিন প্রশাসনের চাপ সৃষ্টি সত্ত্বেও দেশটিতে দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার। বুধবার তুরস্ক সফরে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি এ ঘোষণা দিয়েছেন।

তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করার ল্য নিয়ে তিনি এ সফর করছেন। বৈঠকে তারা দুই দেশের বর্তমান কৌশলগত সম্পর্ক এবং তা আরো গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এ বৈঠকে শেখ তামিম জানান, তার দেশ তুরস্কের মুদ্রাবাজার ও ব্যাংকিং খাতে দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তুরস্কের পণ্যের ওপর নানা রকম বাড়তি শুল্ক আরোপের পদপে নিয়েছেন এবং আঙ্কারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তখন কাতারি আমির তুরস্কের প্রতি এই সমর্থন দিলেন। এরই মধ্যে তুরস্কও মার্কিন কিছু পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন পদেেপ তুর্কি মুদ্রা লিরার মান শতকরা ২০ ভাগ পড়ে গেছে। এ অবস্থায় তুর্কি অর্থনীতি চাঙ্গা করতে তাদের মিত্ররা বিভিন্নমুখী পদপে নিচ্ছে। পাকিস্তানও এরদোগানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

বিরোধ মিটাতে যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত তুরস্ক
এদিকে তুরস্ক জানিয়েছে, উদ্ভূত সঙ্কট এড়াতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত। বুধবার সন্ধ্যায় আঙ্কারায় বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সাথে আলোচনার সময় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুসোগলু এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যাই হোক না কেন, আমরা সমান সহযোগী হিসেবে সমস্যা সমাধানে যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় বসতে তৈরি আছি। তবে এক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে, তা হলো কোনো হুমকি নয়, কোনো স্বেচ্ছাচারিতা নয়। কভুসোগলু এ সময় সাম্প্রতিক মার্কিন নীতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন।

তুরস্কের পক্ষে জার্মান চ্যান্সেলর
তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের চলমান টানাপড়েনের মধ্যে আঙ্কারার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে জার্মানি। বুধবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল তুরস্কের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সফরের মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া হবে। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এ খবর দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান জার্মানি সফরে যাবেন।

এ ছাড়া আগামী কয়েক দিনে তুরস্কের অর্থমন্ত্রী বেরাত আলবায়রাকের সঙ্গে জার্মান অর্থমন্ত্রী পিটার আলতমেয়ারের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, বুধবার ফোনালাপের সময় জার্মান চ্যান্সেলর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জার্মানির স্বার্থেই তুরস্কের শক্তিশালী অর্থনীতি দরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তুরস্কের পণ্যের ওপর বিভিন্ন রকম বাড়তি শুল্ক আরোপের পদপে নিয়েছেন এবং আঙ্কারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তখন মারকেল তুরস্কের প্রতি এই সমর্থন দিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement