২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কী হচ্ছে সুন্দরী প্রতিযোগিতায়

জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল ও আফরিন সুলতানা লাবণী - ছবি : সংগৃহীত

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ সুন্দরী প্রতিযোগিতার। প্রতিবারই আয়োজকরা কোনো না কোনো বিতর্কে জড়াচ্ছেন। এর মধ্যে গত বছর ফলাফল নিয়ে আয়োজক-বিচারকদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তোলার পর প্রতিযোগির বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। আর এবার খোদ বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

চুড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিদের প্রশ্নত্তর পর্বে বিচারকদের হাস্যকর প্রশ্ন তাদের বিচারের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আয়োজকরা নীরব ছিলেন। কারণ বিচারকদের প্রশ্ন কাণ্ডের উত্তর নিজেরাও খুঁজে পাননি। তাই নীরবতার মধ্যেই সমাধান খুঁজেছেন; কিন্তু হঠাৎ করে একজন প্রতিযোগির তথ্য গোপনের অভিযোগে নতুন করে বিতর্কের মাঠ গরম করেছে।


এর আগে গত বছর প্রতিযোগিতার প্রথম আসরেও একই ঘটনা ঘটেছিলো। বিয়ের তথ্য গোপন করে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। চ্যাম্পিয়নের মুকুটও উঠেছিল তার মাথায়। কিন্তু গ্র্যান্ড ফাইনালের পর দিনই বিয়ের খবর প্রকাশ হয়। পরে চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে বিচারকদের অনেকে আপত্তি জানান। এরপর আয়োজক আর বিচারকদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন এভ্রিলকে নিয়ে অনেক পানি ঘোলা হয়। নানা নাটকীয়তা শেষে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এরপর কেড়ে নেয়া হয় এভ্রিলের মুকুট। নতুন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হিসেবে পুরান ঢাকার মেয়ে জেসিয়া ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়।  সেই আয়োজনের পর অনেকের ধারণা ছিল এরপর হয়তো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন আর হবে না; কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দ্বিতীয় বারের মতো এবারো তার আয়োজন হয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে এবারের আয়োজনের শুরুটাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কারন কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রতিযোগিতা শুরু করা হলে সাংবাদিকরা এর কারণ জানতে চান। জবাবে প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী বলেছিলেন ‘নিজের টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান বানাচ্ছি, ঘোষণা দেয়ার কী আছে? গত বছর ছিল প্রথমবারের মতো আয়োজন, তাই সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিলাম।’

তবে এবারের আয়োজন নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘গত বছর কিছু ভুল হয়েছে, এবার যেন আর সে ধরনের কিছু না ঘটে, সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকবে। নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করব।’

কিন্তু এবারো বদনাম-বিতর্ক তাদের পিছু ছাড়েনি। প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্বে একজন বিচারকের প্রশ্ন নিয়েই প্রথম বিতর্কের শুরু। বিচারক ইমি প্রতিযোগিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমাকে যদি তিনটি উইশ করতে বলা হয়, সে উইশগুলো কী হবে? এবং কাকে উইশ করতে চাও? 
এমন প্রশ্নে প্রতিযোগী লাবণী বলেছিলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সি-বিচ কক্সবাজার, সুন্দরবন ও পাহাড়-পর্বতকে তিনি উইশ করতে চান। এরপর সেই বিচারক আর প্রতিযোগীকে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলেই হাস্যরসের হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সে ঝড় না থামতেই ঘটে গতবারের মতো আরেক ঘটনা।

‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, বিবাহিত কেউ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পরই বিতর্ক শুরু হয় এবারের সেরা দশে জায়গা করে নেয়া আফরিন সুলতানা লাবণীকে নিয়ে। তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে এক যুবক জানান, লাবণী বিবাহিত। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। লাবনীর সাবেক স্বামী পরিচয়দানকারী যুবক জানান, তার নাম আতাউর রহমান আতিক। জামালপুর সদরের বাগেরহাটা কলেজ রোডের বাসিন্দা তিনি।

আতিকের ভাষ্য, ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট আদালতে গিয়ে লাবণীকে তিনি বিয়ে করেন। ২০১৬ সালের ১৭ মে তাঁদের তালাক হয়। তালাকের পর লাবণীর নামে চুরির মামলা করেন তিনি। মামলাগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলেও তিনি জানান। স্থানীয় পুলিশও এর সত্যতা স্বীকার করেছে। লাবণীর বাবাও সাংবাদিকদের কাছে মেয়ের বিয়ে ও তালাকের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের স্বপন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ‘এবার যদি কোনো প্রতিযোগী মিথ্যা তথ্য দেন কিংবা তথ্য গোপন করেন, পরে তা প্রমাণিত হলে সেই প্রতিযোগীকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘টপ ফাইভ নিয়ে আমরা ভেবেছি, সেরা দশ নয়।’ আমাদের তো ৩০ হাজার প্রতিযোগী, সবার তথ্য যাচাই-বাছাই করা সম্ভব নয়। তাই টপ ফাইভে যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে এসব শর্ত কার্যকর হবে। কারণ আমরা চ্যাম্পিয়ন একজনকে বাছাই করে দেশের বাইরে চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় পাঠাই। এর মধ্যে হঠাৎ করে যদি তদন্তে বের হয় যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ব্যক্তি তথ্য গোপন করেছেন কিংবা বিয়ে করেছেন, সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থার জন্যই টপ ফাইভ রাখা হয়েছে। এর বাইরে যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই’।

বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম একটা আয়োজনে অনেক বিষয় থাকে যা শতভাগ যাচাই কারো দ্বারাই সম্ভব না। কারণ প্রতিযোগিরা আমাদের ঘরের সদস্য নয়। তাই তাদের দেয়া তথ্যেই আমাদের আস্থা রেখে এগোতে হয়। এ ক্ষেত্রে কানো ব্যক্তির দ্বারা কোন বিতর্ক তৈরি হলে সে দায় আমাদের নয়।

প্রতিযোগীতার অন্যতম বিচারক সংগীত শিল্পী শুভ্রদেব বিতর্কের বিষয়ে বলেন, কোনো প্রতিযোগী যদি তথ্য গোপন করেন তা তার একান্ত বিষয়। এখানে আয়োজক কিংবা বিচারকের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন এমন ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে প্রায়ই এমন ঘটে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল অন্তর শোবিজ। এ প্রতিযোগিতায় জয়ী জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলে বিয়ের খবর গোপন করার অভিযোগে বাদ দেয়া হয় তাকে। সে বছর অন্তর শোবিজের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।


আরো সংবাদ



premium cement