২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় উৎকণ্ঠা

অনেক এলাকায় আ’লীগের নেতাকর্মীরাও ঘরছাড়া
-

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ডা। পরাজিত অনেক প্রার্থীও এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আত্মগোপনে চলে গেছেন তাদের কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদেরও অনেকে ঘরছাড়া। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তো ঘর ছাড়া হয়েছেন আগেই। এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও ঘরছাড়া হয়ে পড়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন সরকার সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত সাদু। সাদু অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের দিন থেকেই মাহবুব আলমের লোকজন নানাভাবে তার কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও নাজেহাল করছে। গত রোববারও মাহবুবের লোকেরা সাদুর লোকজনকে মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, বিষয়টি তারা পুলিশকে জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কামরুজ্জামান কাজল। গতবারের কাউন্সিলর তিনি। এবারে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল বাসার। নির্বাচনে বাসার জিতেছেন। কাজল অভিযোগ করেন, নির্বাচনের দিনই বাসারের লোকজন তিনি ও তার ছেলের ওপর আক্রমণ চালায়। ওইদিন দুই দফায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। মগবাজার ডাক্তার গলিতে তার ভাড়া বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। শিমুল ও শিশিরের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। রোববার বেলা ৩টার দিকে তিন প্রার্থীকেই ডেকে নেন ওই জোনের ডিসি। তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয় সেই নির্দেশ দেয়া হয়। ডিসির নির্দেশনার ৮ ঘণ্টার মাথায় কাজলের বাসার নিচে ১০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজলের এক সমর্থক জানান, তারা এখন চরম ভয়ের মধ্যে আছেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত ফিরোজ আলম। ইব্রাহিম আগেও ওই এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন। ফিরোজ আলম হেরে যাওয়ায় ইব্রাহিমের লোকজনের ওপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত শনিবার রায়েরবাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে সুমন নামের এক যুবক। সে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এক প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিল বলে জানা গেছে। নির্বাচন শেষে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়ার সময় তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
নির্বাচনের দিন রাজধানীর রায়েরবাজার সুলতানগঞ্জ সাদেক খান রোডে হামলার শিকার হন সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন। টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার ব্যাচ ধারণকারী কতিপয় দুর্বৃত্ত সুমনকে কুপিয়ে আহত করে। ঘটনার এক দিন পরে টিফিন ক্যারিয়ার মার্কা নিয়ে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন খোকন ও তার লোকজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এই ঘটনায় কোনো মামলা না করার ব্যাপারে হুমকি দেন সুমনকে।
কামরাঙ্গিরচরের এক বিএনপি সমর্থক জানান, তারা বাড়িঘর ছাড়া অনেক আগে থেকেই। নির্বাচন উপলক্ষে অনেক নেতাকর্মী এলাকায় গিয়েছিলেন কিন্তু নির্বাচনের দিন থেকেই তারা আবারো এলাকা ছাড়া। সালাম নামের এক বাসিন্দা একজন কাউন্সিলরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তার জন্য তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ঘরছাড়া। সেখানে বিএনপি থাকবে কি করে?
৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা সামির বলেন, এ দেশে বিএনপির কোনো ভোট নেই। তাদের ওয়ার্ডে ৪৭ হাজারের মতো ভোট আছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুর আলম সাত হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তিনি পেয়েছেন ৫৩০ ভোট। বুঝাই যায় কতভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে!
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বাড্ডায় সাংবাদিকদের আটকে রাখে দুর্বৃত্তরা। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। কারো সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডেমরায় নির্বাচিত কাউন্সিলর ও কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর
ডেমরা সংবাদদাতা জানান, ডেমরায় ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো: ইবরাহীমের বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় রামদা, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ কাউন্সিলরের ১০-১২ জন কর্মীর ওপর হামলা চালালে তারা গুরুতর আহত হন। হামলার পর ওই দুর্বৃত্তরা কাউন্সিলরের কয়েকজন কর্মীর বাড়িতে গিয়েও হামলা চালায়। এ সময় কাউন্সিলরের প্রতিবেশী আত্মীয় ফেরদৌসি নামের মহিলাকে রামদা দিয়ে কোপ দেয় দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে সারুলিয়া আমতলা এলাকায় ওই কাউন্সিলরের বাড়ি ও বাড়ির নিচের অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর ইবরাহীম অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো: ফিরোজ আলমের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো: ফিরোজ আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর ইবরাহীমের নেতাকর্মীদের বাগি¦তণ্ডা হয়। নির্বাচন কেন্দ্র করে ওই সব ঘটনায় গত রোববার রাতে হঠাৎ পরপর দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ইবরাহীমের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। ওই রাতে অন্তত আড়াইশ সন্ত্রাসী একত্র হয়ে ভাঙচুর ও হামলা চালায়।
কাউন্সিলর ইবরাহীম নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হওয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো: ফিরোজ আলম আমার বাড়ি ও কার্যালয়ে তার নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সহিংসতা চালিয়েছেন। ফোন করে বিষয়টি নিয়ে তার সাথে আলাপ করলে তিনি কর্ণপাত না করে উল্টো আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। ফিরোজ আলমের নেতাকর্মীদের ওপর আমরা হামলা চালিয়েছি এমন অপপ্রচার চালানোসহ আমাকে মৃত্যুর হুমকিও দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো: সিদ্দিকুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে ওই দুর্বৃত্তরা ফিরোজ আলমের নেতাকর্মী কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কারণ ফিরোজ আলম এ বিষয়ে অস্বীকার করেছেন। ফিরোজ আলম পাল্টা অভিযোগ করেন তার নেতাকর্মীদের ওপর ইবরাহীমের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করেছেন যারা, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ নেয়া হয়েছে তদন্তও চলছে। এ ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়াসহ দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানান ওসি।


আরো সংবাদ



premium cement