০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


লাশ হয়ে আসছে শিশু জায়ান

-

বাবা-মায়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় নিহত হয়েছে জায়ান চৌধুরী (৮)। সে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি। জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স আহত হয়ে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিশু জায়ানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার সকল আনুষ্ঠানিকতা গতকাল সম্পন্ন না হওয়ায় আজ মঙ্গলবারের পরিবর্তে আগামীকাল বুধবার আনা হচ্ছে। বোমা হামলায় গত রোববার রক্তাক্ত হয় শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো। সেখানকার একটি পাঁচতারা হোটেলে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়েছিলেন শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় শেখ সেলিমের বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন সাংবাদিকদের জানান, শ্রীলঙ্কার ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। তারপরও আমরা এসেছি শেখ সেলিমকে সান্ত্বনা দিতে। তার নাতি জায়ান চৌধুরী মারা গেছে। কিন্তু জামাতা এখনো সেভ আছেন। তবে তার দু’টি পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার জায়ানের লাশ দেশে এসে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শেখ সেলিমের মেয়ে সোনিয়াও এখন পর্যন্ত জানে না যে তার ছেলে নেই। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন। শ্রীলঙ্কা সরকারের সাথে কথা হচ্ছে। আমাদের অ্যাম্বাসির লোকজন যোগাযোগ করছেন।
শেখ সেলিমের একান্ত সচিব ইমরুল কায়েস সাংবাদিকদের জানান, হামলার সময় হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন মশিউল হক ও তার বড় ছেলে জায়ান। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন। তিনি আরো জানান, খবর শোনার পর বেলা ৩টার দিকে শেখ সেলিমের স্ত্রী ও ছোট ছেলে শেখ ফজলে নাঈম শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ব্রæনেই থেকে শেখ ফজলে ফাহিমও শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ রওনা দিয়েছেন। স্যার (শেখ সেলিম) ঢাকার বাড়িতেই রয়েছেন জানিয়ে ইমরুল বলেন, উনাকে সান্ত্বনা দিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও স্বজনেরা বাড়িতে এসেছেন। সকাল থেকেই মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বনানীর বাসায় আসতে শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শেখ সেলিমের ভাই শেখ মারুফ প্রমুখ। বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয় স্বজনেরাও শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় আসছেন শোকাহত পরিবারকে একটু সান্ত্বনা দেয়ার জন্য।
জানা গেছে, নাতি জায়ান চৌধুরী শেখ সেলিমের বনানীর বাসায়ই থাকত। সে কারণে এখানেই মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল সকালে ১০-১২ জন হাফেজ বাসার নিচতলায় কুরআন খতম দেন। বাসার সামনে ও রাস্তার দুই পাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নাতি জায়ানের জন্য কবরের জায়গা দেখতে দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে বনানী কবরস্থানে যান শেখ সেলিম। কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে আসেন। তবে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি।
শেখ সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন দল ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। গতকাল শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও মহাসচিব মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভ‚ঁইয়া।
যুবলীগের শোক প্রকাশ : জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: হারুনুর রশীদ এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
গোপালগঞ্জে শোকের ছায়া : এদিকে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হওয়ার খবরে গোপালগঞ্জের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত রোববার রাতে গোপালগঞ্জে এ খবর পৌঁছানোর পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে দল মত নির্বিশেষে সব মানুষ। প্রাণপ্রিয় নেতার আদরের নাতি জায়ান চৌধুরীর মর্মান্তিক মৃত্যু দলের নেতাকর্মীদের বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় নেতা শেখ সেলিম ও তার পরিবারকে বিপদে ধৈর্য ধারণ ও শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দান করবে এ দোয়া করি।
এ ছাড়া জায়ান চৌধুরী নিহতের ঘটনায় শোক জ্ঞাপন ও সমবেদনা জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু জানিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিটু, গোপালগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসমত আলী সিকদার চুন্নু, সাধারণ সম্পাদক সিকদার মো: নজরুল ইসলাম, টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, টুঙ্গিপাড়ার পৌর মেয়র শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা, কাশিয়ানী আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: মোক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাহাঙ্গীর আলম, কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র জয়ধর, সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ুন কবীর ও মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আতিকুর রহমান মিয়া প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement