২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভৌতিক মামলায় আতঙ্ক

-

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার থানাগুলোতে একের পর এক মামলা হচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা এসব মামলার আসামি। কোনো ঘটনা না ঘটলেও এ মামলাগুলো দায়ের করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। যারা এসব মামলার আসামি এবং তাদের স্বজনরা এর নাম দিয়েছেন ভৌতিক মামলা। এসব মামলা নিয়ে এখন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজধানীর লালবাগ থানা। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে এ থানায় ১১টি মামলা হয়েছে। যে মামলাগুলোর ধরন একই। মিছিল, নাশকতা সৃষ্টি, জনমনে ভীতির সৃষ্টি, ককটেল নিক্ষেপ ইত্যাদি অভিযোগে এ মামলাগুলো করা হয়। এসব মামলায় যারা আসামি হচ্ছেন তারা সবাই স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের বাসায় গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ফোন নম্বর দিয়ে এসে যোগাযোগ এবং ম্যানেজ করতে বলে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১টি মামলা হয়েছে, এর সব মামলারই ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থনে এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করা। এ ছাড়া জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করা।
৩ সেপ্টেম্বর এসআই আনিসুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলা নং ৩(০৯)১৮। ঘটনাস্থল মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ার। মামলায় আসামি করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ২৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আশরাফ আলী আজমসহ বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন এসএম জহিরুল আলম। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬।
পরদিন দায়ের করা মামলায় পূর্বের মামলার আসামিসহ ৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং ৫(০৯)১৮। বাদি আ: মোনায়েম। ঘটনাস্থল আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/৪২৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬।
এর পরদিন কাছাকাছি সময়ে দুটি মামলা করা হয়েছে। ৬(০৯)১৮ নং মামলার ঘটনার সময় হলো ৫ সেপ্টেম্বর ১৪:১৫ মিনিট। ঘটনাস্থল নিউ পল্টন ইরাকি মাঠ। ৭(০৯)১৮ নং মামলার ঘটনার সময় হলো ১৬:৪৫ মিনিট। ঘটনাস্থল খান মোহাম্মদ মসজিদ। দুটি মামলার আসামিও একই ব্যক্তিরা। একটিতে ৩৩ জন আরেকটিতে ৩৪ জন এবং আরো ৭০-৮০ জন। ধারাও একই। ১৪৩/ ১৪৭/ ১৪৮/ ১৪৯/ ৩৫৩/ ৩০৭/ ১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬। ৬ নং মামলা আসামির নামের তালিকায় তসাদ্দেক হোসেন বাবলুর নাম দুইবার (৩ নং ও ২১নং) এসেছে। ৭ নং মামলায় শামিমুল বারি ও (৫নং ও ২১নং) তসাদ্দেক হোসেন বাবলুর নাম ২ বার (৬ ও ৩৩ নং) এসেছে। প্রথমটির বাদি এস এম জহিরুল আলম। দ্বিতীয়টির মো: আবদুল আউয়াল। আবার প্রথমটির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন মো: আবদুল আউয়াল দ্বিতীয়টির মো: মামুন হোসেন।
৮ সেপ্টেম্বর তপনকুমার দেবনাথ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন, যার নং ১০(০৯)১৮। ঘটনার সময় ৯:৩০ মিনিট, স্থান বেড়িবাঁধ লোহার ব্রিজ। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬। আসামি ৩০ জন। তদন্ত কর্মকর্তা শেখ শাহ আলম।
১০ সেপ্টেম্বর আ: কাদের বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন, যার নং ১৫(০৯)১৮। ঘটনার সময় ১১:৫৫ মিনিট, স্থান গোরে শহীদ মাজার। ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/৩০৭/১০৯ পেনাল কোড তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ৩/৪/৬। আসামি ২২ জন। তদন্ত কর্মকর্তা মো: গোলাম রব্বানী।
১২ সেপ্টেম্বর ও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একরামুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করা মামলা নং ১৭(০৯)১৮। মামুন হোসেন বাদি হয়ে দায়ের করা মামলা নং ১৯(০৯)১৮ ধারা একই। আসামি ২২ জন।
১৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলার বাদি মোতালেব। নং ২১(০৯)১৮। ঘটনাস্থল বেড়িবাঁধ মদিনা ট্রেডিং। আসামি ২৮ জন।
১৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা অপর মামলার বাদি লুৎফর রহমান। নং ২৩(০৯)১৮। ঘটনাস্থল লালবাগ চৌরাস্তা এরাবিয়ান মাস্টার রেস্টুরেন্ট । আসামি ৩৭ জন।
১৫ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলার বাদি আবু জাফর। নং ২৮(০৯)১৮। ঘটনাস্থল আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ। আসামি ২৮ জন।
কয়েকটি স্থানে ঘুরে খবর নিয়ে জানা গেছে, যে সময় ওইসব ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সময় কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের কাছে খবর নেই। তারা কোনো মিছিল বা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনেননি। লালবাগ থানার ওসির কাছে মামলাগুলোর তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত চলছে। কোনো গ্রেফতার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো গ্রেফতার নেই।


আরো সংবাদ



premium cement