০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পক্ষে মত কূটনীতিকদের

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের শান্তির অঙ্গীকার শীর্ষক অনুষ্ঠান : নয়া দিগন্ত -

নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অবাধে অংশগ্রহণ চাইছেন বাংলাদেশের শীর্ষ কূটনৈতিক অংশীদাররা। এ ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, সব মতাদর্শের ব্যক্তির দমন-পীড়নের ভীতি ছাড়াই মুক্তভাবে রাজনৈতিক অভিমত ব্যক্ত করা, দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ-মিছিলে যোগ দেয়ার অধিকার অবশ্যই থাকতে হবে। তিনি বলেন, দলগুলোকে অবশ্যই বিরোধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈধ অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসাবে মেনে নিতে হবে।
একই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বিশ্বাস করেন আর সহিষ্ণু রাজনীতি দেশের সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে। আজকে আমরা সবাই এখানে একত্র হয়েছি, কারণ আমরা সবাই একই আকাক্সক্ষা ধারণ করি।
গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনী প্রচারণাবিষয়ক একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তারা এসব কথা বলেন। ‘শান্তিতে বিজয়’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড এবং ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউকেএইড। ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় ৪০০ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একই মঞ্চে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনের শপথ গ্রহণ করেছেন। এতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বক্তব্য রাখেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন এবং নির্বাচনের পর সব প্রক্রিয়ায় অহিংস পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সহিংসতা কেবল বাংলাদেশের ও তার জনগণের স্বার্থ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে থাকা দেশগুলোর জন্য সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের অবশ্যই নিজেদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ, প্রচার চালানো এবং ভয়ভীতি, প্রতিশোধ বা জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ ছাড়া শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। ইসু বা নীতির বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈধ অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে।
মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশীদের অবশ্যই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচনের আগে, চলাকালে এবং পরে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে অহিংস আচরণ করার আহ্বান জানাতে হবে। সহিংসতা শুধু তাদেরই কাজে আসে, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের স্বার্থহানি করতে চায়।
বানির্কাট বলেন, শান্তি, সহিষ্ণুতা ও অন্তর্ভুক্তিÑ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। সরকার, রাজনৈতিক দল, নাগরিকসমাজ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে সমন্বয়ের ভিত্তিতে আমরা শান্তিপূর্ণ ও অগ্রগামী বাংলাদেশ নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে এবং রাজনীতি দেশের সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
এইচ টি ইমাম বলেন, আমরা সুষ্ঠু, অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমাদের দল বা সরকার এ ব্যাপারে কখনো পিছপা হবো না। অতীতেও হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও আদর্শ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার সবসময় আন্তরিক রয়েছে। আগামীতে শান্তিপূর্র্ণ নির্বাচনের জন্য ভুল ও মিথ্যা প্রচারণা থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে, বিদ্বেষ ছড়ানোর পথ থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
ড. মঈন খান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, একই সাথে নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তবে শান্তির পূর্বশর্ত হলো সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি অদ্বিতীয়। কারণ এখানে সারা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এক ছাদের নিচে একত্র হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শান্তিতে বিজয় ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য হলো, দেশে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনীতির পক্ষে একাত্ম হওয়ার মঞ্চ তৈরি করা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করার জন্য সারা দেশে ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইনের আওতায় আয়োজিত হচ্ছে শান্তি শোভাযাত্রা, নির্বাচনী প্রার্থীদের সাথে মুখোমুখি সংলাপ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে গোলটেবিল বৈঠক ও কর্মশালা। সেই সাথে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পালিত হচ্ছে ‘শান্তিতে বিজয়’ কর্মসূচি। এই অনুষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় নাগরিক ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা একত্র হয়ে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার স্বপক্ষে একসাথে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্ম ও রাজনৈতিক নেতাদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement