০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুইজনকে ছুরিকাঘাত ফ্রান্সে

‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুইজনকে ছুরিকাঘাত ফ্রান্সে - সংগৃহীত

ফ্রান্সের একটি সুপারমার্কেটে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুইজনকে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কালো পোশাক পরা এক তরুণীর বিরুদ্ধে।

রোববার সকালে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের লা সেয়নে-সার-মের’র ই.লেক্লার্ক নামের এই সুপারমার্কেটে দুই ক্রেতাকে ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ছুরিকাঘাত করেন।

শপিংয়ের সময় এক পুরুষের বুকে ছুরিকাঘাত করেন এই তরুণী। দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। মার্কেটের ক্যাশ ডেস্কের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীকেও আঘাত করেন তিনি কিন্তু তা গুরুতর নয়।

মার্কেটটির কর্মকর্তারা জানান, কর্মচারীরা দ্রুতই হামলাকারী তরুণীকে ধরে ফেলেন। তিনি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তার বয়স ২৪ বছর মতো হতে পারে। তিনি মানসিক রোগী বলে জানা গেছে।

তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বার্নার্ড ম্যার্চ্যাল বলেন, আপাতদৃষ্টিতে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা ঘটিয়েছেন একজন মানসিক রোগী। তবে এটা আসলেই বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

তিনি বলেন, আলামত দেখে মনে হচ্ছে হত্যা করার জন্য ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আমরা জানি না যে এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত কিনা সেই ব্যাপারে জানতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা চলছে।

এর আগে প্যারিসের কাছে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ছুরিকাঘাতে একজনকে নিহত এবং চারজনকে আহত করেন এক ছুরিধারী। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্যারিসের প্যারিসে শার্লি হেবদো নামের রম্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার কার্যালয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৪০ জনেরও বেশি লোক মারা যান।

ইতালির সমালোচনায় ফ্রান্স, সম্পর্ক উত্তপ্ত
রয়টার্স

ইতালি ফ্রান্সের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। অভিবাসীদের উদ্ধারকারী জাহাজ ইতালির বন্দরে ভিড়তে না দেয়ায় দেশটির সমালোচনা করেছে ফ্রান্স। প্রতিবাদ জানাতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইতালি।

অভিভাবকহীন ১২৩ জন শিশু থাকা অভিবাসীদের উদ্ধারকারী ওই জাহাজকে বন্দরে ভিড়তে না দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, ইতালির আচরণ ‘পাগলামিপূর্ণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।’

জবাবে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি বলেছেন, ‘কারো কাছ থেকে আমাদের দানশীলতা, স্বেচ্ছাসেবিতা, উদার হওয়া ও ঐক্যের ধারণা’ শিখতে হবে না।

অভিবাসীবিরোধী অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট লিগের প্রধান সালভিনি ইতালির সমালোচনা করার জন্য ফ্রান্সকে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে দেশ নিজেদের সীমান্তে নিয়মিত অভিবাসীদের আটক করে, সেই দেশের কাছ থেকে সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত নয় ইতালি। 
ফ্রান্সের মন্তব্যের পর ইতালির অর্থমন্ত্রী জিওভানি ট্রিয়া ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জাহাজাটিকেও ইতালীয় বন্দরের আশা বাদ দিয়ে স্পেনের দিকে রওনা হতে হয়েছে।

ইতালির রক্ষণশীল সরকারের সিদ্ধান্তে দেশটির ‘মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির বন্দরে নোঙর করতে চাওয়া জাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরেই স্থির থাকার আদেশ দিয়েছিল। অ্যাকুরিয়াস নামের জাহাজটিতে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন, যাদের লিবিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধার তৎপরতায় ইতালির নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডও অংশ নিয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন উদ্ধার তৎপরতায় উদ্ধারকৃতদের অ্যাকুরিয়াসে তুলে দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইতালির সমালোচনা করেন।

ক্ষুব্ধ ইতালির পাল্টা বক্তব্যের পর বুধবার সুর নরম করে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অ্যাগনেস ভন দের মুল বলেছেন, ‘অভিবাসীদের কারণে যে ইতালির ওপর চাপ পড়ছে তা আমরা বুঝি।’ তারা অভিবাসীদের বিষয়ে ইতালি সরকারকে সহায়তা করারও আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতেও ইতালির ক্ষোভ কমেনি। ফ্রান্সের মুখপাত্রের বক্তব্যের পরেও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনজো মোয়াভেরো বলেছেন, ‘ফরাসি প্রেসিডেন্ট যে মন্তব্য করেছিলেন তা অগ্রহণযোগ্য।’

ওই জাহাজে থাকা মানুষেরা বেশিরভাগই সাব-সাহারান এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনকে উদ্ধার করেছে ইতালির নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বাণিজ্যিক জাহাজ। উদ্ধারকৃতদের ১২৩ জন এমন শিশু যাদের সঙ্গে কোনো অভিভাবক নেই। ১১ জন খুবই ছোট শিশু ও ৭ জন গর্ভবতী নারী রয়েছেন ওই জাহাজে। শিশুগুলোর বেশিরভাগই ইরিত্রিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়া ও সুদানের বাসিন্দা।

শেষ পর্যন্ত অভিবাসীদের নিয়ে অ্যাকুরিয়াস জাহাজটিকে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের ভ্যালেনসিয়া বন্দরের দিকে যাত্রা করতে হয়েছে। বুধবার ভ্যালেনসিয়ার দিকে যাত্রা করা অ্যাকুরিয়াসের সেখানে পৌঁছানোর কথা আগামী শনিবার।

নেতানিয়াহুর বিচার দাবিতে বিক্ষোভ, ইরানের পক্ষে ফ্রান্স
আল-জাজিরা

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিচার দাবিতে মঙ্গলবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ হয়েছে। ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা থামাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সফরে বর্তমানে ফ্রান্সে রয়েছেন নেতানিয়াহু। প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে 'যুদ্ধাপরাধী' বলে অভিযুক্ত করেন। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল কর্তৃক দমনপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান তারা। 

বিক্ষোভে অংশ নেয়া ১৯ বছর বয়সী এক কিশোরী বলেন, আমরা এখানে নেতানিয়াহুকে হ্যালো বলতে এসেছি। তাকে ও বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছি যে, ইসরাইলি বাহিনী গত মাসে ১২৫ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। সংহতি প্রকাশের জন্য তার হাতে একটি ফিলিস্তিনি পতাকাও ছিল। ফ্রান্স-ইসরাইল সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন এবং ইরানের বিরুদ্ধে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সমর্থন আদায়ে প্যারিস সফরে নেতানিয়াহু।

২০ বছর বয়সী চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন বলেন, ফিলিস্তিনি প্যারামেডিক রাজন আল নাজ্জারকে অমানবিকভাবে হত্যায় আমরা উদ্বিগ্ন। ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধে আমরা ব্যথিত। নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে বিস্ফোরক বুলেট ছোড়া হয়েছে, তা আমাদের ব্যথিত করে বলে জানিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সের জ্যাকুইজ। গ্রান্ড প্যালেইস প্রদর্শনী হলে সামনে থেকে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যেখানে দুই দেশের যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা। বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এতে এক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে প্যারিস সফর করছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি তার সফর উপলক্ষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তাতেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইরান পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, আপনার কাছে পরমাণু সমঝোতা অপর্যাপ্ত মনে হলেও এটি স্বাক্ষরের আগের অবস্থার চেয়ে এটি ভালো বলে এ সমঝোতা রক্ষা করতে হবে। সংঘর্ষ এড়াতে পরিস্থিতি আরও জটিলতার দিকে না নেয়ার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।

ম্যাক্রোঁ বলেছেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সব পক্ষকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ, পরিস্থিতি জটিল করলে তার একটাই ফল: সংঘর্ষ। ওয়াশিংটন এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছে বলে বাকি সবাই তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে এমনটি ভাবা ঠিক না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ মে পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছেন। এর পরেই চুক্তি রক্ষার জন্য ইউরোপীয় নেতারা উদ্যোগী হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement